পাঁচদিন বন্ধের পর খুলেছে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর। এ বন্ধের কারণে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যার অকার্যকর হয়।
এতে ভারত, ভুটান থেকে আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যের এলসি, বিল অব এন্ট্রি, শুল্কায়ন ও পেমেন্টসংক্রান্ত কোনো তথ্য জানা সম্ভব না হওয়ায় ব্যবসায়িক সব কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
এ কয়েকদিনে সরকার প্রায় ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে। আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদেরও সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ সব ব্যবসায়ী কার্যক্রম চালু হয়। ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক না হওয়ায় বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব সফটওয়্যারে কাজ করতে না পারায় এদিন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করে আমদানি-রপ্তানির গাড়ি থেকে পণ্য গ্রহণ ও খালাস করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এইদিন ৫৫টি পণ্যবাহী গাড়ি ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ৫৮টি গাড়ি রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে যায়। অন্যান্য দিন এ স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে ৩শ পণ্যবাহী আমদানি ও শতাধিক গাড়িতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করা হয়।
কোটাবিরোধী আন্দোলন সহিংসতা ও কারফিউয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে গত পাঁচ দিনে আমদানিকারকদের বিভিন্ন পণ্যের এলসি করা থাকলেও প্রায় দেড় হাজার গাড়ি ভারত ও ভূটান থেকে দেশে আনা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঝুট তুলা, সূতা, প্রাণের বিভিন্ন পণ্যবাহী পাঁচ শতাধিক গাড়ি ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এ কয়েকদিনে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধায় পণ্যবাহী গাড়ি পড়ে থাকা ও বুড়িমারীতে রপ্তানির উদ্দেশে আনা গাড়ি আটকে থাকায় প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে সব ব্যবসায়ীর প্রায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কয়েকশ কর্মচারী ও কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। বর্তমানে কার্যক্রম চালু হলেও ইন্টারনেট না থাকায় ধীর গতিতে চলছে আমদানি-রপ্তানি।
কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এ কয়েকদিনে ব্যবসায়ীরা পণ্যবাহী গাড়ি আনতে ও পাঠাতে না পারায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়নি। বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং ইন্টারনেট সেবা সচল করা হলে পুরোদমে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরলে রাজস্ব আয় গতি পাবে। বুড়িমারী স্থলবন্দরের রপ্তানিকারক মেসার্স শারমিলা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শামসুল আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমার গাড়ি আসার কথা ছিল। সহিংসতার কারণে সঠিক সময়ে আসতে না পারায় আমার প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এভাবে প্রত্যেক রপ্তানি ও আমদানিকারকের ক্ষতি হয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি রুহুল আমীন বাবুল বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হয়েছে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম চলছে। আশা করছি দ্রুতই স্বাভাবিক অবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরে আসবে।
বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস) সহকারী কমিশনার (এসি) নাজমুল হাসান বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হবে।
মন্তব্য করুন