কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বসতভিাটা নদীগর্ভে হারিয়ে মাথা গোঁজারা ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছেন না এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। বেশ কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ঢলে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধির ফলে চরের নিম্নাঞ্চলগুলোয় বন্যার রূপ নিয়েছিল। এখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে হুমকির মুখে নগরপাড়া, কুমারপাড়া, মুন্সিপাড়া ও বামনপাড়া গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবারের ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মানুষ। হুমকির মুখে আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১টি, মসজিদ ৪টি ও নুরানি মাদ্রাসা ১টি।
এ ছাড়াও উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব ইউনিয়নের নদী ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে পশ্চিম বজরা, বাঁধের মাথা, উত্তর সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট নদীর পশ্চিম পাড়, সাতালস্কর, চর বজরা, সন্তোষ অভিরাম, কাজিরচক, টিটমা, ঠুটাপাইকার, কর্পুরা, লাল মসজিদ ও অর্জুন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের নতুন করে নদী ভাঙনে কয়েক একর আবাদি জমি এবং বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা পাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। তিস্তার ভাঙনে শতশত বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থার দাবি জানান। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে তাড়াতাড়ি ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে এসব এলাকার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের ৩ থেকে ৪ হাজার পরিবারের ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ অসহায় হয়ে যাবে।
এ ছাড়াও গোড়াই পিয়ার দাখিল মাদ্রাসা, গোড়াই পিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর হোকডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি ওয়ার্ড ক্লিনিক, ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ উক্ত গ্রামগুলোর কয়েক হাজার পরিবার। তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকেরা বলেন, আমরা কোনো সাহায্য চাই না, নদী সংস্কার চাই।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকায় চোখের সামনে তিস্তার গর্ভে বসতভিটে বিলীন হয়ে যাওয়া মনোয়ারা বেগম (৬৫) বলেন, আমি বিধবা হয়েছি ২৫ বছর হয়ে গেছে। আমার একমাত্র সম্বল বসতভিটে। আজ তিস্তা কেড়ে নিল। আমি কোথায় যাব, কোথায় থাকব, কী খাব।
বসতভিটে বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে অন্যের বাড়িতে থাকা বাসিন্দারা বলেন, তিস্তা নদী আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের চলার মতো কিছুই থাকল না। আমরা এখন অন্যের বাড়িতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। নদী ভাঙন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ভাঙন কবলিত এলাকার স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙনে আমাদের পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে। আমরা স্কুলে যেতে পারি না। রাতে ঘুমাতে পারি না। বাসায় পড়াশোনা করেতে পারি না। তিস্তা নদী আমাদের স্বপ্ন গুলো ভেঙে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন এলাকাগুলোর জন্য বরাদ্দের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ হয়ে আসলে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া পর্যাক্রমে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে ভাঙন রোধের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান বলেন, নতুন করে নদী ভাঙনের শিকার পরিবারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন