কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র ১০ মহররম বা আশুরা পালিত হয়েছে। এ বছর ১৬৩ বারের মতো পালিত হয়েছে আশুরা বা ১০ মহররম।
জানা যায়, অষ্টগ্রামে শোকাবহ আয়োজনে ১৬৩ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। পবিত্র মহররমে চাঁদ দেখার পর অষ্টগ্রাম সদর উপজেলার হাবেলী পাড়া এলাকার হাবেলী’র ইমামবাড়ায় শুরু হয় লাল কালো নিশান উত্তোলন। পরে ১০টি রোজা, নামাজ, জারি, মাতম, মর্সিয়া, নিরামিষ ভোজন, খালি-পা ও মাটিতে শয়ন, তাবারক বিতরণসহ নানা রকম নিয়মকানুন মেনে আশুরা পালন করেন স্থানীয়রা।
এই ১০ দিনের মধ্যে বাঁশ, কাঠ ও রঙিন কাগজ দিয়ে শুরু করে তাজিয়া বানানোর কাজ। প্রতিরাতে চলে শোকের জারি গান আর সঙ্গে মাতম। সর্বশেষ ১০ মহররম তাজিয়াসহ মিছিল করে স্থানীয় কারবালা হাটির কারবালা মাঠে তাজিয়া অর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা।
অষ্টগ্রাম হাবেলী বাড়ি সূত্রে জানা যায়, সুন্নিদের মধ্যে অষ্টগ্রামে শোকাবহ মহররমের প্রধান প্রবক্তা হজরত শাহজালাল (র.) সহচর সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র.) ১৩তম বংশধর; জোয়ান শাহী পরগনার ন’কোষা জমিদার ও ‘ভাটির ওলি’ খ্যাত হজরত সৈয়দ আব্দুল করিম আল-হোসাইনী (রহ.), যিনি ‘সৈয়দ আলাই মিয়া সাহেব’ নামে পরিচিত। তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হওয়ায়, ১৮৩৬ সালে অনাদায়ী খাজনার জন্য ন’কোষা জমিদারি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। তিনি হোসাইন প্রেমে মগ্ন হয়ে, জমিদারি ও আভিজাত্য ত্যাগ করে এক জীর্ণ কুটিরে অবস্থান ও সাধনায় করতেন। তার ভক্ত অনুসারীদের, ‘গুরু-শিষ্য লোভী-কামী উভয় নরকগামী এবং ভোগে নয় ত্যাগেই খোদা প্রাপ্তি হয়’ বলে হোসাইনী প্রেমে উজ্জীবিত করে গেছেন।
শোকাবহ পবিত্র মহররমের ১০ দিনের মধ্যে মূল অনুষ্ঠান হয় ৯ ও ১০ মহররম। ৯ মহররম ইমাম হোসাইনের রোহানী ফায়েজ হাসিলের উদ্দেশ্যে অষ্টগ্রাম হাবলী’র ইমামবাড়ায় গর্স্ত (প্রদক্ষিণ) ও ১০ মহররম স্থানীয় কারবালায় (হাটখলা) রঙিন তাজিয়া নিয়ে শোক মিছিলের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় ঐতিহ্যবাহী অষ্টগ্রামের আশুরার।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিক মিয়া বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই এ আশুরা পালন করে আসছি। মহররম মাসের ১০ দিন আমরা খালি পায়ে হাঁটি, মাটিতে ঘুমাই, কোনো ধরনের আমিষ খাই না, ১০টি রোজা রাখি। আমাদের বাপ, দাদারা পালন করতেন। এখন আমরা পালন করি।
অষ্টগ্রাম হাবেলী বাড়ির পীর ও বর্তমান সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, আমরা হোসাইন পন্থি, সত্যের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন ও মিথ্যার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে থাকি। শোকাবহ মহররম মানুষের মধ্যে ধৈর্য ত্যাগ ন্যায়পরায়ণতায় উদ্বুদ্ধ এবং সত্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করে। শোকাবহ মহররমে সুন্নি মুসলিমদের কল্যাণ কামনা করি।
মন্তব্য করুন