ঝালকাঠি জেলায় বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে বাংলার সুয়েজ খাল খ্যাত গাবখান নদীর ওপর নির্মিত পঞ্চম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। ঝালকাঠিবাসীর অবসর সময় কাটানো ও বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এ সেতুটি।
শহরের লোকজন বিনোদনের জন্য বিকেলে ও সন্ধ্যায় মুক্ত বাতাস খেতে ব্রিজে ভিড় জমান গাবখান সেতুর উপর। কিন্তু ইদানীং সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার নামে ঝালকাঠির গাবখান সেতুতে। বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের এ সেতুর ওপর দুর্ঘটনা এড়াতে এবং চলাচলকারীদের সুবিধার্থে ৬২টি লাইটপোস্ট স্থাপন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে লাইটপোস্টের ৪৩টি বাতি নষ্ট। সচল রয়েছে মাত্র ১৯টি। তার মধ্যেও কয়েকটি নিভু নিভু জ্বলে। পরিস্থিতি এমন হলেও কর্তৃপক্ষ যেন নির্বিকার।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেতুর উদ্বোধন করেন। চায়না হিলোংজিয়াং ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল করপোরেশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ সেতু নির্মাণ করে। বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ উঁচু সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯১৮ মিটার, দীর্ঘতম স্প্যান রয়েছে ১১৬ দশমিক ২০ মিটার (যা দেশের সর্বোচ্চ), নিম্নতম স্প্যান রয়েছে ৩০ মিটার। ২৪টি পিলার ও দুটি অ্যাবাটমেন্ট রয়েছে। ক্যারেজওয়ে রয়েছে ৭ দশমিক ৫০ মিটার। প্রতি পাশে সাইড ওয়াক রয়েছে ১ দশমিক ২৫ মিটার। ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রয়েছে ১৮ মিটার। ৮১ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ঝালকাঠির গাবখানে স্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে।
নিয়মিত চলাচলকারী ও স্থানীয়রা জানান, সেতু উদ্বোধনের ২২ বছর অতিবাহিত হতেই বাতিগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর পর সড়ক বাতিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সন্ধ্যা হলেই সেতুর ওপর নেমে আসে অন্ধকার। এ কারণে প্রায় সময়ই ছিনতাইসহ ছোটোখাটো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
মোটরসাইকেলচালক মিজানুর রহমান জানান, ব্রিজে উঠলেই দেখা যায় বাতিগুলো জ্বলে না। সামনে থেকে বড় কোনো গাড়ি এলে তখন আর চোখে কিছু দেখা যায় না। মাথায় হেলমেট থাকলে সবকিছু তখন ধোঁয়া দেখা যায়। পাশে মোটরসাইকেল রেখে অনেকেই বাতাস উপভোগ করেন। সড়ক বাতি না থাকলে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। নতুন চালক হলে তো দুর্ঘটনা থেকে রেহাই নেই। তা ছাড়া রাতে অনেকে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন এ ব্রিজে। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা খুবই বেশি থাকে। অনেকদিন যাবত এমন অবস্থা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি না পড়লে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
গাড়িচালক মোহাম্মদ হোসেন গাজী জানান, আমাদের গাড়ির হেডলাইটের মাধ্যমে অন্যান্য সড়কের মতো পথ দেখে চলতে হয়। সড়কের বাতি না থাকায় বাঁকে বাঁকে চলার সময় ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে।
অটোচালক মামুন হাওলাদার জানান, গাবখান ব্রিজের ওপরের বাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অন্ধকার থাকে বেশিরভাগ জায়গাই। ব্রিজ পারাপারের সময় সামনে থেকে পরিবহন বা ট্রাক এলে তখন কিছু চোখে দেখা যায় না। অনেক সময় পাশে মোটরসাইকেল থামিয়ে বাতাসে বসেন বাইকাররা। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইদ্রিস মল্লিক ব্রিজে বাতি বন্ধ থাকার বিষয়কে হতাশাজনক উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ গাফিলতি বলে মনে করেন।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান জানান, সেতুর বাতিগুলোর বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। বাতি পুনঃস্থাপনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন