শেখ মমিন, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ কাজ, ভোগান্তি চরমে

রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল। ছবি : কালবেলা
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল। ছবি : কালবেলা

রাজবাড়ী জেলা সদরে রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু হয়। কিন্তু দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও দীর্ঘ ৫ বছরেও নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এতে প্রতিদিন বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসকদেরও। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

রাজবাড়ীতে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তির কথা ভেবে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয় ৫০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন মাসে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পর পর তিনবার সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত এসে গড়ায়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। দফায় দফায় সময় বাড়লেও নির্মাণ কাজে কোনো গতি নেই। আর ১০০ বেডের হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। এতে প্রায়ই সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগে পড়ছেন হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে দীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় এতে কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ কোনো নজর নেই। অদৃশ্য কোনো গাফিলতির কারণে যেন নির্মাণ কাজ বন্ধ না হয় এবং অতি দ্রুত ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ পায় জিকেবিপিএল ও এসসিএল জয়েন্ট ভেঞ্চার নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জুন মাসে নতুন ভবনের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দফায় দফায় তিনবার সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হচ্ছে না।

এদিকে নতুন নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যার হাসপাতালের সামনে এবং আশপাশের বর্তমান অবস্থা নাজেহাল। নোংরা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া জেলা সদর হাসপাতালে বিশেষ করে টয়লেটগুলো বেশিরভাগই ব্যবহারযোগ্য নয়। তবুও হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা অস্বাস্থ্যকর টয়লেটগুলো বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছে। হাসপাতালের টয়লেটসহ ওয়ার্ডের পরিবেশও ভালো না। ভবনের পাশে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। জেলার পাঁচটি হাসপাতালের চিত্র ঠিক একইরকম।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের অনেক আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। সেগুলোও যথাযথ সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।

আর রোগী ও রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে ২৫০ শয্যা নির্মাণের কাজ হচ্ছে। তবে এ কাজ কবে শেষ হবে সেটা কিন্তু অনিশ্চিত। কারণ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু এখন তো জুলাই মাস। এখনো কাজ চলছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা বর্তমানে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

রোগীর চাপ বেশি থাকায় তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে থেকে আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। তা ছাড়া ওয়ার্ডেও ঠিকমতো সেবা পান না। নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যা ভবনের কাজ শেষ হলে পর্যাপ্ত চিকিৎসক পদায়ন হতো এবং ভালো সেবা পেত তারা।

হাসপাতালে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক রোগী কালবেলাকে বলেন, আমাদের চিকিৎসার জন্য অনেক সমস্যা হচ্ছে। এই ভবনটা যদি হতো তাহলে ফরিদপুরে যাওয়া লাগত না। আমাদের জন্য অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে দীর্ঘ বছর ধরে এ কাজ হচ্ছে। আমরা চাই এ ভবনটা দ্রুতই হয়ে যাক।

পপি খাতুন নামের এক রোগী কালবেলাকে বলেন, যখন কাজ দেরিতে হয় তখন ভোগান্তি বেড়ে যায় এবং ভোগান্তি তো থাকেই। তারপরও যারা ঠিকাদার বা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। তারা যদি এ কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে কমপ্লিট করতে পারে তাহলে রোগীদের ভোগান্তি কমে আসবে। এখানে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকতে পারে। এ জাতীয় যাদের দেখার দায়িত্ব আছে অতি দ্রুতই দেখে সমস্যা সমাধান করলে রোগীরা ভোগান্তির হাত থেকে মুক্তি পেত।

নুর ইসলাম নামের স্থানীয় বাসিন্দা কালবেলাকে বলেন, অনেক ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। বিগত প্রায় পাঁচ বছর ধরে কাজ চলছে। কিন্তু এ কাজ এখনো শেষের কোনো দিক নাই। যার কারণে এটা কোনো ঠিকাদারের সমস্যা বা ওপর মহলের যারা আছেন- এমপি বা জনপ্রতিনিধি, তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সে কারণেই এ কাজে এত ধীরগতি হচ্ছে।

হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন আরিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি নির্মাণ হচ্ছে বহুকাল ধরে। এখন পর্যন্ত কাজের কোনো সমাপ্তি ঘটেনি। যার কারণে হাসপাতালে প্রচুর রোগী আসেন। এখানে যে পরিমাণ রোগী আসেন, সে তুলনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। যার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য বসে থাকে। সিরিয়ালে থাকতে থাকতে ডাক্তারের দেখা পায় না। পরে তারা আবার বাড়িতে চলে যায়।

ইমার্জেন্সিতে চাকরিরত সাদিয়া ইসলাম রত্না কালবেলাকে বলেন, এ কাজটা দ্রুত হলে রোগীদের একটু ভালো হতো। রোগীরা চিকিৎসাসেবা ভালো পেত। এখন থেকে দ্রুত কাজ হলে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকত। কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত নির্মাণ কাজটি শেষ করে দেয়।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান কালবেলাকে জানান, হাসপাতালে নিয়মিতভাবে ২৭০ জনের বেশি রোগী থাকে। এ ছাড়াও সপ্তাহে দুই দিন রবি ও বৃহস্পতিবার রোগীর সংখ্যা বেশি বৃদ্ধি পায়। আমাদের অতিরিক্ত অনেক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। করোনাকালীন সময়ে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি থাকায় ২৫০ শয্যার কাজ করা সম্ভব হয়নি। আর এ কারণেই মূলত দেরি হয়েছে। আর এ পরিস্থিতির কারণেই নির্মাণ কাজের সময় বারবার বাড়ানো হয়েছে। তবে আমাদের সুখবর ২৫০ শয্যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে- এ বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছে। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে। নতুন ভবন ডিসেম্বরে হস্তান্তরের কথা চলছে। আর পুরো বিল্ডিং চালু হলে এবং ওয়ার্ড ও চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়লে সেবাদান কার্যক্রম আরও ভালো হবে।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম ইফতেখার মজিদ।

এ ব্যাপারে জানতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘কেন হয় নাই, মানে আপনি আগে অফিসে আসেন, অফিসে এসে কথা বলেন। অফিসে আসেন নির্মাণ কাজ কেন হয় নাই বা কাজটি চলমান আছে। সেটি কী অবস্থা অফিসে আসেন। অফিসে আসলে বলতে পারব।’ ঠিক আছে বলে ফোন কেটে দেন তিনি এবং পরে তাকে বারবার কল করা হলেও আর রিসিভ করেননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১০

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১১

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১২

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৩

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৪

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৫

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৬

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

১৭

বিসিবির দুর্নীতির তদন্ত দাবি সাবেকদের

১৮

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১৯

জেল খেটেছি তবু শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাইনি : সাবেক এমপি হাবিব

২০
X