১২ বছর বয়সী মেয়ে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়ে ৭ দিন ধরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। নারী সার্জারি ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ওই শিশুটির।
সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তার। সেসব পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে নিয়ে পাশে বসে আছেন মা। মেয়েটির চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে এসে যায় চোখে পানি।
পাশে বসে থাকা তার মা বলেন, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে জানিয়ে থানায় মামলা করেছেন তার বাবা। তবে ঘটনার সাত দিন পার হলেও গ্রেপ্তার হয়নি অভিযুক্ত যুবক বিটুল (২৮)। গতকাল রাত ১০টার দিকে কথা হয় মেয়েটির মায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তার মেয়ে একটি এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ি থেকে একটু দূরে মসজিদসংলগ্ন মক্তবে আরবি পড়াশোনা করত সে। প্রতিদিন সকালে মেয়েটি মক্তবে পড়তে যেত। গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) প্রতিদিনের মতো সকালেও একই সময়ে বাড়ি থেকে বের হলে স্থানীয় একটি মোড় পর্যন্ত যায়। যাওয়ার পথে ওত পেতে থাকা মো. বিটুল নামের এক যুবক শিশুটিকে পাশের একটি দোকানে কোলে করে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় সেখানে কোনো লোকজন ছিল না। শিশুটিকে মুখ চেপে বিটুল ধর্ষণের পর পালিয়ে যায়। পরে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বাড়িতে গিয়ে মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেয়েটির মা আরও বলেন, ‘মেয়ের এত কষ্ট দেখে আর ভালো লাগে না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথায় থাকতে পারছে না। ডাক্তার কয়েকটা পরীক্ষা করাতে দিয়েছেন। আমরা গরিব মানুষ, একদিন কাজ না করলে খাবার জোটে না। এখন চিকিৎসায় খরচ করারও টাকা নেই। আমি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বোদা থানায় বিটুলের নামে একটি মামলা করেছি। এক সপ্তাহ হয়ে গেল, কিন্তু বিটুলকে ধরতে পারছে না পুলিশ। আমি তার ফাঁসি চাই।’
মেয়েটির বাবা জানান, জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের একটি গ্রামে বাড়ি তাদের। মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি। গত মঙ্গলবার সকালে ঘটনার পর মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসা নিয়ে তিন দিন পর বাড়িতে নিয়ে গেলেও গত শনিবার আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে তার মেয়ে। পরে তাকে আবারও পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবুল কাশেম বলেন, ‘মেয়েটি সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট নিয়ে এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। পরে আইনি প্রক্রিয়ায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন আবার সে পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক মোবাইল ফোনে বলেন, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত যুবক পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। বুধবার (১০ জুলাই) পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সে সঙ্গে মেয়েটি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারব।
মন্তব্য করুন