কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরের বিরামপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে।
এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকায়। বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। তবে দেশি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়।
বিরামপুর পৌর বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মরিচ ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে আমদানি কম হওয়ায় মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে বিরামপুর পৌর বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি হলেও বাজারে মরিচের দামের ওপর এর প্রভাব পড়ছে না। চাহিদার তুলনায় কাঁচামরিচ আমদানি কম হওয়ায় এবং দেশে উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা ও সবজি জাতীয় পণ্যেরও দাম বাড়ছে। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সোমবার সকালে বিরামপুর নতুন বাজারে উপজেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবাবগঞ্জ থেকে বাজার করতে আসা জাহিনুর ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে এখন প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কয়েকদিন আগেই ১৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ কিনেছিলাম। তা কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চলা কঠিন হয়ে যাবে।
বিরামপুর বাজারের ব্যবসায়ী কুদ্দুস আলী বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে মরিচ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে কাঁচামরিচ আমদানি হচ্ছে না। সেই কারণে বাহির থেকে বেশি দামে কাঁচামরিচ কিনে আনতে হচ্ছে।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ বলেন, বৃষ্টির পর অতিরিক্ত গরমের কারণে মরিচ গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। গাছ মরে যাছে। ফলে মরিচের উৎপাদন কম হচ্ছে। ১০ কাঠা জমিতে মরিচ লাগিয়েছিলাম। ১৫ দিন পর মাত্র ২০ কেজি মরিচ তুলতে পেরেছি। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মাদিলাহাট সৈয়দপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৫০ শতক জমিতে এবার মরিচ আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। ৪ হাজার মরিচের গাছ ছিল। তার মধ্যে ৩ হাজার মরিচের গাছ মারা গেছে। এখন ১ হাজার গাছ থেকে মরিচ তুলেছি মাত্র ৪০ কেজি। পাইকারি ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। মরিচের গাছ নষ্টের কারণে ফলন কম হওয়ায় লোকশান গুনতে হচ্ছে।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, মরিচ ক্ষেত মাকট জাতীয় পোকা দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মরিচের গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মরিচের ফলন ভালো হচ্ছে না। এ উপজেলা এবার মরিচের আবাদ হয়েছে ৪৩ হেক্টর। গত বছর হয়েছিল ৪০ হেক্টর জমিতে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, এ বছর দিনাজপুরে মরিচ আবাদ হয়েছে ৯৬২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৭৩২ টন। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৯৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৭৮২ টন।
দিনাজপুর কৃষি বিপণন সিনিয়র কর্মকর্তা রবিউল হাসান কালবেলাকে বলেন, লাগাতার বৃষ্টির কারণে মরিচ চাষিদের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে ফলন কম হচ্ছে। ফলে মরিচের দাম দিন দিন বাড়ছে।
মন্তব্য করুন