মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে হয়েছিল শরিফা ও কলেজ ছাত্র শাহিনুরের। স্ত্রী শরিফার হাতে এখনো রয়ে গেছে মেহেদির রঙ। মেহেদীর রঙ না শুকাতেই নির্মমভাবে খুন হলেন শাহিনুর। বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না শরিফা বেগমের। এক বছরে তিন বিয়ে করেও পেলেন না সুন্দর জীবন।
প্রথম স্বামীকে তালাক দেওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন শরিফা। বিয়ের কিছুদিন পর দ্বিতীয় স্বামীর রহস্যজনক মৃত্যু হয় এবং একই আলামত নিয়ে তৃতীয় স্বামী খুন হন। মাত্র ২০ বছর বয়সে পর পর তিনজন স্বামী হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন শরিফা।
জানা গেছে, এক টুকরো জমির ওপর নির্মিত দুচালা টিনের ঘরে একমাত্র ছেলে ও ছেলে বউ নিয়ে থাকতেন শাহিনুরের বাবা মা। বয়োবৃদ্ধ বাবা কোনো কাজ কর্ম করতে পারেন না। ছেলে শাহিনুর পড়াশোনার পাশাপাশি ইলেকট্রিকমিস্ত্রির কাজ করে বৃদ্ধ বাবা মায়ের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিয়ে সচল রেখেছিল সংসারের চাকা। ঠিক তখনি সব শেষ হয়ে গেল। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে পরিবারের আশা-ভরসার পরিসমাপ্তি ঘটল।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চিনিপাড়া নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিনুর ওই এলাকার কাসেম আলীর ছেলে ও স্থানীয় একটি বিএম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
নিহত শাহিনুরের স্ত্রী শরিফা জানান, ঘটনার দিন বাড়ি থেকে বের হলে আর ঘরে ফেরেনি কলেজছাত্র শাহিনুর। অন্ধকারে রাস্তায় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী শাহিনুরকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন খবর পেয়ে ছুটে যায় পরিবারের লোকজন। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। আর সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ দিন পর গত বুধবার (১০ জুলাই) ভোর রাতে মারা যায় শাহিনুর। চিকিৎসা চলা অবস্থা ওই ৭ দিন কোনো কথা বলতে পারেনি শাহিনুর। তাই পরিবারের লোকজন জানতেও পারেনি হত্যাকারীদের নাম। তবে জিহ্বা কাটা ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত শাহিনুরের স্ত্রী শরিফা।
এদিকে যখন ছেলের মৃত্যু শোকে কাতর বাবা-মা, তখন চাচা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ‘একজনকে বাইসাইকেল লেগে দেওয়ার অভিযোগে শাহিনুরকে পিটিয়ে মারা হয়েছে’ উল্লেখ করে একই পরিবারের চারজনের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরা হলেন, মোতালেব, ছেলে দুলু মিয়া, মেয়ে জামাই এনামুল হক ও মিজান মিয়া।
এদিকে আসামি পরিবারের লোকজন আসামিদের নির্দোষ দাবি করেন এবং ঘটনায় আসামিরাই জড়িত উল্লেখ করে র্যাব, সিআইডি ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তারা মামলাটি পুনঃতদন্তের দাবি জানান।
আর হত্যা মামলা দায়েরের পর দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে গ্রামবাসী। এক গ্রুপের দাবি আসামিরা নির্দোষ। বাইসাইকেল দুর্ঘটনা ও মারধরের নামে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। তারা মামলা পুনরায় তদন্তের জন্য র্যাব, সিআইডিসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দিয়েছেন। করেছেন সংবাদ সম্মেলন। আর অপর গ্রুপ এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার, করেছেন মানববন্ধন। কিন্তু নিহত কলেজ ছাত্রের পরিবারের দাবি, হত্যাকারী যারাই হোক দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই।
নিহত শাহিনুরের বাবা আবুল কাসেম বলেন, আসামিরা আমার ছেলেকে মেরেছে কিনা আমরা জানি না। কে মেরেছে তাও জানি না। তদন্ত করে আসল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, কলেজছাত্র শাহিনুর হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে আসামিপক্ষের অভিযোগসহ সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে মামলার তদন্ত চলছে।