বগুড়ার সোনাতলা ভায়া নারুয়ামালা সড়কে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাচল করছে দশ চাকার ড্রাম ট্রাক। ফলে সড়কটিতে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ওজনের বালুবোঝাই দশ চাকার ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটির সর্বনাশ হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে ভেলুরপাড়া, সৈয়দ আহমদ কলেজ ও গাবতলী এলাকার হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহন চালকদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
সরেজমিনে সোনাতলার ভেলুরপাড়া থেকে চরপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, সোনাকানিয়া গুড়াভাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চরপাড়া পর্যন্ত দশ কিলোমিটার রাস্তায় বড় বড় গর্তে পুকুরের মতো পানি জমে আছে। আবার কিছু কিছু অংশে এত কাদা যে, হেঁটে চলাচলেরও অনুপযোগী। ফলে পথচারী ও যানবাহনচালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ রাস্তার পাশে বয়ড়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে একটি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের খুব কষ্ট করে কেন্দ্রে আসতে হচ্ছে।
বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার সময় বেশ কয়েকবার ভ্যান থেকে তাদের নামতে হয়েছে এবং ঠেলতে হয়েছে ভ্যান। এর জন্য তাদের জামাকাপড় কাদায় মেখে গেছে। সেগুলো ধুয়েমুছে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত রাস্তাটি সংস্করণ এবং অনতিবিলম্বে দ্বৈত আকারের ড্রাম ট্রাকগুলো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে।
জিল্লুর রহমান, গোলজার, রেজাউল করিমসহ কয়েকজন ভ্যানচালক বলেন, সোনাকানিয়া থেকে চরপাড়া যেতে অনেক জায়গায় যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয় এবং ভ্যান ঠেলে পার করতে হয়। রাস্তার এ বেহাল দশার জন্য তারা ৪০ টন ওজনের বালুবোঝাই দশ চাকার ড্রাম ট্রাক চলাচলকেই দুষছেন।
পথচারীরা বলেন, এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি দশ চাকার ড্রাম ট্রাক এবং দিনে ৮০ থেকে ৯০টি বালুবোঝাই কাঁকড়া গাড়ি চলাচল করে। আর এ কারণেই রাস্তাটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহনসহ লোকজনের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তারা আরও জানান, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বলেও কোনো ফল হয়নি। তাই তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনাকানিয়া ও উত্তর বয়ড়া গ্রামের কয়েকজন বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল দশ চাকার ড্রাম ট্রাক দিয়ে রাতে বালু নিয়ে যায়, বলতে গেলে তারা বলেন টাকা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বালু ক্রয় করা হয়েছে। এভাবেই বালু যাবে।
জোড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী জানান, সোনাতলা ভায়া নারুয়ামালা রাস্তায় সোনাকানিয়া থেকে চরপাড়া পর্যন্ত একেবারেই বেহালদশা এবং যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার চরপাড়া থেকে সৈয়দ আহম্মদ কলেজ পর্যন্ত ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনিও ড্রাম ট্রাক চলাচলকেই দায়ী করেছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. মাহবুবুল হক জানান, রাস্তাটির পাশে দুটি বালুমহাল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ড্রাম ট্রাকে এ বালুগুলো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বালুবোঝাই ট্রাকের ওজন প্রায় ৪০ টন, যা এ রাস্তার ধারণক্ষমতার অনেক উপরে। ফলে রাস্তাটির এমন দৃশ্য হয়েছে। রাস্তাটির অন্ততপক্ষে ১৫ কিলোমিটার আরসিসি ঢালাই করলে এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে। এজন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য করুন