মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:২০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বর্ষায় সৌন্দর্য বিলাচ্ছে নীল শালুক ফুল

জলাশয়ে ফুটেছে নানা রঙের শালুক বা শাপলা ফুল। ছবি : কালবেলা
জলাশয়ে ফুটেছে নানা রঙের শালুক বা শাপলা ফুল। ছবি : কালবেলা

ঋতুচক্রে এখন বর্ষা ঋতু। বর্ষা ষড়ঋতুর দ্বিতীয় ঋতু। প্রকৃতিতে এখন চলছে আষাঢ় মাস। ঘন ঘন বৃষ্টির ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বর্ষার রূপ। পতিত জমি, খাল, বিল ও জলাশয় পানিতে টইটুম্বুর হয়ে উঠেছে। এসব পতিত জমি, খাল, বিল ও জলাশয়ে ফুটেছে নানা রঙের শালুক বা শাপলা ফুল। এতে যেন বর্ষার মোহনীয় রূপ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

এমন চিত্রই দেখা গেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন জলাশয়ে। ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমীসহ অনেকেই বিস্তীর্ণ জলাভূমির এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে এই উপজেলার জলাভূমিগুলোতে বর্ষা মৌসুমে তেমন একটা পানি জমতে দেখা যায়নি। তবে এ বছর আগাম বর্ষা ও ভারি বর্ষণের ফলে খাল বিলে অনেক পানি জমেছে, যা বিলের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। এসব জলাশয়ে অনেক ধরনের ফুলের মধ্যে শাপলা ও শালুক বেশি ফুটেছে। তবে এসব ফুলের মধ্যে বিশেষভাবে নজর কাড়ছে নীল শালুক ফুল।

উপজেলার চান্দলা হুড়ারপাড়-চারাধারী বিলে গিয়ে দেখা গেছে, মুগ্ধতা বিলিয়ে ফুটে আছে নীল শালুক বা শাপলা ফুল, যার সৌন্দর্য পৌরাণিক সাহিত্যের নীলকমলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্মরণ করিয়ে দেয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত 'কেউ কথা রাখেনি' কবিতার কথা। যেখানে নানাবাড়ির মাঝি নাদের আলী কবিকে নীল পদ্মের বিল দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেও সে কথা রাখেননি তিনি। তবে এ সময়ে হুড়ারপাড়-চারাধারী অঞ্চলের পানিতে টইটুম্বুর বিলের নীল শালুকের সৌন্দর্যে কবি নিশ্চয়ই বিমোহিত হতেন।

জলে ভেসে থাকা বড় বড় পাতার ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা নীল শালুক বা শাপলা ফুলগুলো অনায়াসেই যে কারো নজর কাড়বে। সচরাচর জলাশয়ের জলে সাদা শাপলা দেখা যায়। এ উপজেলায় নীল শালুকের ছড়ানো এমন মুগ্ধতা খুব বেশি একটা চোখে পড়ে না। তবে এই বিলে বিকেল হলেই নানা বয়সি মানুষ আসছেন এসব নয়নাভিরাম ফুলের মুগ্ধতা লুফে নিতে। আবার কেউ কেউ আসছেন সপরিবারে বা সবান্ধবে। এসব ফুলের সৌন্দর্যের কারণেই যেন বর্ষার প্রকৃত রূপ ফুটে উঠেছে। প্রকৃতির এই নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্যে যে কারো মন ভরে যাবে।

এছাড়াও উপজেলার মাধবপুর, শশীদল, শিদলাই, দুলালপুর ও মালাপাড়া ইউনিয়নের কিছু কিছু জলাশয়ে সাদা শাপলার পাশাপাশি নীল শালুক বা শাপলা দেখা গেছে। এসব নীল শালুক বা শাপলা যেন বর্ষাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

চান্দলা হুড়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রতিবছর বর্ষার মাঝামাঝি ও শেষের দিকে বিলে যখন পানি বেশি হয় তখন নীল শালুক, সাদা শাপলা সহ অনেক সুন্দর সুন্দর ফুলে বিল ভরে যায়। এ বছর বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় আগেভাগেই বিল ভরে গেছে। সচরাচর এই ফুল দেখা যায় না বলে বিকেল হলেই নানা বয়েসি লোকজন এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা চান্দলা করিম বক্স হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নীল শালুক বিলটিকে আলাদা সৌন্দর্য দিয়েছে। শহুরে জীবনের বাইরে মুক্ত গ্রামীণ আবহ পেতে বিলটি হতে পারে একটি আদর্শ স্থান। স্থানীয় অনেকেই আসছেন এ বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বর্ষার জল আর শালুক ফুলের সৌন্দর্যে যেন বর্ষার চিরায়ত রূপ ফুটে উঠেছে।

জানা গেছে, নীল শালুক বা শাপলা Nymphae গোত্রের এক প্রকারের জলজ উদ্ভিদ। এর বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এর আদি নিবাস আফ্রিকা মহাদেশে। Nymphaea capensis প্রজাতির নীল শাপলা ফুলের পাপড়ির রঙ গাঢ় নীল। এর পাতা গোলাকার ও খাঁজ যুক্ত। Nymphaea caerulea প্রজাতির নীল শালুক বা শাপলার পাতা ও ফুল ক্ষুদ্রাকার, এবং পাপড়ির রঙ হালকা নীল। এটি কীভাবে বাংলাদেশে এসেছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা না থাকলেও এক সময় বাংলার বিলে-ঝিলে অহরহ নীল শালুক দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে নীল শালুকের আর সেভাবে দেখা মেলে না। এটি এখন বিলুপ্তপ্রায় একটি সৌন্দর্যবিলাসী ফুল।

বহু ঔষধি গুণও রয়েছে এই শাপলা বা শালুকের। হজমের সমস্যায় এই ফুল ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এই উদ্ভিদ উপকারী। অতিরিক্ত পিপাসা নিবারক ও আমাশা রোধে ব্যবহার করা হয় এই উদ্ভিদ। সাধারণত ওষুধের জন্য এই উদ্ভিদের ফুল ও বীজ ব্যবহার করা হয়। এই উদ্ভিদের বীজ খই হিসাবে ভেজে খাওয়া হয়। শালুক বা শাপলার ডাঁটা ইলিশ ও চিংড়ির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। এ ছাড়া নারকেল বাটা দিয়ে শালুক বা শাপলার ঝোল খাওয়ার স্বাদই আলাদা। শালুক ফল সেদ্ধ করে বা রান্না করে খাওয়া যায়। অবশ্য নীল শালুক বা শাপলা বিলুপ্তির পথে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শঙ্খজিৎ সমাজপতি বলেন, সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। তবে নীল শালুক বা শাপলা ফুলের সাথেও বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। খাল, বিল, ফসলি মাঠ, ডোবা, পুকুর ও জলাশয়ে একসময় শালুক বা শাপলা ফুল অহরহ দেখা যেত। তবে নীল শালুক দিন দিন বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে ফোটা নীল শালুক বা শাপলার সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করছে।

তিনি বলেন, শালুক বা শাপলার মধ্যে রয়েছে ঔষধিগুণ। এর ডাঁটায় পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটিকে সবজি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়। এর ফল সেদ্ধ করে ও রান্না করে খাওয়া যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১০

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১১

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১২

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৩

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৪

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৫

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৬

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৭

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

১৮

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস

১৯

আমার কষ্ট নেই, আজ আমরা স্বৈরাচারমুক্ত : আহত তানভীরের পিতা

২০
X