মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:১৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চায় নদীপাড়ের মানুষ

১১০ পয়েন্টে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। ছবি : সংগৃহীত
১১০ পয়েন্টে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। ছবি : সংগৃহীত

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন-ভারতের রশি টানাটানি ও তাদের ভূরাজনীতিতে পা না দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ৬ দফা দাবিতে মহাসমাবেশের পর এবার ১১০ পয়েন্টে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা পয়েন্টে এই অভিনব কর্মসূচি পালন করেন তারা। এই কর্মসূচিতে অবস্থান নেন তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ।

আন্দোলনরত নেতারা বলেন, তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী হলেও পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তির এক দশকেও আলোর মুখ দেখেনি। এই অবস্থায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দফায় ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আশার আলো উঠলেও, তিস্তায় ভারত সরকারের নতুন করে সমীক্ষার প্রস্তাবে প্রকল্প ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানুষজন বলেন, দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু রংপুর অঞ্চল কোনো প্রকল্পই পাচ্ছে না, এই বৈষম্য দূর করতে হবে। দেশে বড় বড় মেগা প্রকল্প চলছে কিন্তু তিস্তার জন্য কেন সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না। অথচ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে ভাঙন ও ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পাবে লাখো মানুষ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

তারা বলেন, রংপুরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা চাই তিনি তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ বছরই কাজ শুরু করবেন।

জানা গেছে, ১৭৮৭ সালে এক মহাপ্লাবনে তিস্তার ভারত-বাংলাদেশে পানিপ্রবাহে কোথাও বাধা না থাকলেও নদীর ভারত অংশে বাঁধ দেওয়ায়, বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটারে শুষ্ক মৌসুমে মরুভূমি আর বর্ষায় ১ লাখ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছে। বন্যা-খড়ায় গতিপথ বদলে তিস্তা হয়ে উঠেছে রাক্ষুসে। প্রতি বছর ঘরবাড়ি, আবাদি জমি হারিয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

২০২৩ সালের মার্চে তিস্তা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন জমা দেয় চীনের একটি প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগে আগ্রহ এবং দ্রুতই তিস্তা প্রকল্প শুরু করতে চায় দেশটি। তবে একই প্রকল্পে ভারতের কারিগরি দল পাঠানো ও নতুন করে সমীক্ষার প্রস্তাব, বিনিয়োগ এবং একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরাসরি বিরোধিতায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।

এছাড়াও ২৭ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, তিস্তা যেহেতু ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী, সে কারণে ভারত সহযোগিতা করলেই ভালো হয়। ফলে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে ভারত ও চীনের আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি দুই পরাশক্তির টানাপোড়েনে বহু আকাঙ্ক্ষিত এই প্রকল্প যেন ভেস্তে না যায়-সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিস্তা পারের মানুষ ও আন্দোলনরত নেতারা।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ও নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, যে দেশ দীর্ঘ সময়ে পানি শোষণ করছে তিস্তাকে মেরে ফেলার সব আয়োজন করেছে, তাদের এমন প্রস্তাব শুধু সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে ভারত। যেখানে শুধু সই করলেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যায়, সেখানে নতুন করে তিস্তা প্রকল্পে সমীক্ষা করতে কারিগরি টিম পাঠানো এই প্রকল্পকে বিলম্বিত করবে। এ থেকে নতুন করেও সরকারকে ভাবতে হবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর চীন সফর করলেন। মানুষ জানতে চায় মহাপরিকল্পনা কী হলো? আমরা জানি ভু-রাজনীতির কারণে একটা বড় সমস্যা আছে। তাদের প্রতিযোগিতার চিপায় আমরা পড়েছি। আমরা অনেক আগেই চিন্তা করেছি যে ভারত এখানে বাঁধা দিবে, তাই নিজস্ব অর্থায়নের কোন বিকল্প নেই। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, চীন ভারত বা অন্য রাষ্ট্রের ভূ-রাজনীতি বুঝি না। তারা আমাদের বন্ধু হলে তারা উন্নয়নে সহায়তা করবেন। আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করতে চাই।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা নিয়ে ভারত-চীনের রাজনীতি দেখতে চাই না। এটা আমাদের নিজস্ব প্রকল্প। ভারত বা চীনের নয়। তাদের রাজনীতিতে আমরা পা দিতে চাই না। পদ্মা সেতুর মতো প্রয়োজনে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, ভারত সহযোগিতা চরতে চায় করুক, আমাদের আপত্তি নেই। এই প্রকল্পে ভারতের অংশ নেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে, উজানে পানি প্রত্যাহার না করে তারা সেখানে নদী খনন এবং সমন্বয়ন করলে এই সমস্যার সমাধান হবে। আমরা সেটাই চাই। আমরা তিস্তা পারের দুই কোটি মানুষ প্রস্তুত রয়েছি। সাধ্যমতো সহায়তা করবো। তবুও এই প্রকল্প নিয়ে আর কালক্ষেপণ চাই না। প্রকল্প বাস্তবায়ন চাই।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গেল ১০ বছরে তিস্তা গিলেছে অন্তত ১০ লাখ কোটি টাকার সম্পদ। যার অন্যতম কারণ সংস্কারের অভাবে নাব্য হারিয়ে তিস্তার গভীরতা কমে গেছে। ফলে সামান্য পানিতেই সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা ও ভাঙনের মতো দুর্যোগ। তবে তিস্তা পারের বাসিন্দাদের প্রত্যাশা, ভ‚-রাজনৈতিক শক্ত প্রতীক‚লতার পাহাড় ডিঙিয়ে সূচিত হবে রংপুর অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নযাত্রা তিস্তা মহাপরিকল্পনা।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, দেশের উত্তরে বিশেষ করে রংপুর অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব থেকে তিস্তা এখন গুরুত্বপূর্ণ। এটার সমাধানের বিকল্প নেই। বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে হলেই এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। নিজস্ব অর্থায়নে করতে হবে। ভারত চীন কী রাজনীতি করতে চায় সেটা তাদের ব্যাপার। তাদের ফাঁদে আমরা পা দিতে চাই না। এ বছরই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু চাই। প্রয়োজনে এই অঞ্চলের মানুষ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী রনি পেল হুইলচেয়ার

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

১০

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

১১

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১৩

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১৪

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৬

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৭

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৯

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

২০
X