মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যে গ্রামের প্রতিটা বাড়ি মানেই মুরগির খামার

ছোট-বড় পোল্ট্রি মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী যে এলাকার মানুষ। ছবি : কালবেলা
ছোট-বড় পোল্ট্রি মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী যে এলাকার মানুষ। ছবি : কালবেলা

পাহাড়ের মাটিতে আঁকাবাঁকা সর্পিল রাস্তা পেরিয়ে, গভীর অরণ্য ভেদ করে একখণ্ড অজপাড়াগাঁও, অবহেলিত এই গ্রামের প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় পোল্ট্রি মুরগির খামার করে। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি মানেই এক একটি খামার। মুরগির কিচিরমিচির ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে তাদের। গ্রামজুড়ে মুরগির খামারে সয়লাব। অলস সময় বসে না থেকে মুরগির খামার করে এ গ্রামের সবাই আজ স্বাবলম্বী এবং সফল উদ্যোক্তা। তাদের খামারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমানে নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারেও এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা।

গ্রাম গঞ্জে পোল্ট্রি খামারের বিস্তার ঘটলে দেশে নিরাপদ ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে এলাকায় পোল্ট্রি খামারে মুরগি পালনে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরীয় ওষুধ কম ব্যবহার করে তারা অরগানিক পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে থাকেন। পরিকল্পনা করে মুরগির বিষ্টা দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করে নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামেও গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব। অথচ পরিকল্পনার অভাবে নামমাত্র মূল্যে এসব বিষ্ঠা বিক্রি করে দেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাটিরাঙ্গায় শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বেলছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের স্বর্ণকার টিলা নামক একটি গ্রাম। পথ চলতে দেখা মিলবে, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পাদদেশে, বসতবাড়ির সামনে স্থাপিত মুরগির খামার। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত চারপাশ। ছোট বড় সব ধরনের মুরগির খামার রয়েছে এখানে। সর্বনিম্ন ২ হাজার মুরগির শেড থেকে শুরু করে ৪ হাজার মুরগির শেড রয়েছে এই গ্রামে।

জানা যায়, ২০১২ সালে আজিজুল ইসলাম নামে এক যুবক পোল্ট্রি মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে মানিকছড়ির এক ডিলারের সাহচর্যে গিয়ে তারই দিকনির্দেশনা এবং সহযোগিতায় প্রথমে এ এলাকায় ১ হাজার মুরগি দিয়ে একটি খামার শুরু করেন। ১ ম বছরে সফল হওয়ায় শুরু হয় মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন। তখন থেকে ২০১৬ সালে ৪ বছরের ব্যবধানে এ গ্রামের অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেন পোল্ট্রি খামারের ব্যবসা। ১ যুগ পরে এসে ১৩০ পরিবারের ১৮০ টি খামার রয়েছে। বর্তমানে এই গ্রামের সকলের আয়ের একমাত্র উৎস পোল্ট্রি খামার। গ্রামটি এখন আগের চেয়েও অনেক উন্নত। পথ চলতে দুএকটা উঁচু অট্রালিকাও চোখে পড়ে এ এলাকায়। যদিও যাতায়াতের একটি মাত্র রাস্তায় এখনো ইটের সলিং।

বর্তমানে এসব পোলট্রি খামারে প্রতিমাসে প্রায় ৪লাখ মোরগ উৎপাদন করা হয়। এসব মোরগ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যত্র তথা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাইকারি বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এ ব্যবসায়। তবে বিদ্যুৎ না থাকার জরুরি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভেকসিন ফ্রিজআপ করাসহ দারুণ বেগ পোহাতে হয়েছিল খামারিদের। সম্প্রতি ওই এলাকায় বিদ্যুতায়ন করে এসব যন্ত্রণা লাঘব করা হয়েছে।

মুরগির উৎপাদন আশানুরূপ হলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই শিডিউলের অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে চরম হতাশায় ভুগছেন তারা। ফলে লাভের অংশ হারিয়ে এ ব্যবসায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন সকলে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ একটি গাড়ি কুমিল্লায় যেতে তাদের এ অঞ্চলেই ৩ স্থানে টোল দিতে হয়। প্রথমে, বেলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদে প্রতি গাড়ি ৫০০ টাকা, মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় ১৭০০টাকা, জেলা পরিষদের টোল ১৭০০ টাকাসহ মোট ৩৯০০ টাকার টোল দিতে হয়। প্রতি মাসে ৪০০ গাড়ি তে টোল দিতে হয় ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার টোল দিতে হয়। ফলে উচ্চহারে টোলের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সফল হবার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে।

খামারিয়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে মুরগির ব্যবসা পরিচালনা করেন। এভাবে যদি একাধিক স্থানে উচ্চ হারে টোল আদায় করা হয় তাহলে লাভের অংশ কমে তারা ঋণী হয়ে যাবেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

প্রতি মাসে প্রায় ৪লাখ মোরগ উৎপাদন হয় এসব খামারে। প্রতিটি মোরগ গড়ে দেড় কেজি করে হলে উৎপাদন হয় ৬ লাখ কেজি মোরগ । প্রতি কেজি মোরগ সর্বশেষ বাজার দর হিসেবে ১৬৯ টাকা করে বিক্রি করা হয়। ফলে প্রতিমাসে ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকার মোরগ বিক্রি হয়। বছরে ১২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার পোল্ট্রি বিক্রি করা হয়। পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে মুরগি ব্যবসা শুরু করি অতিরিক্ত টোল আদায়ের ফলে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। লাভের অংশ কমে যাচ্ছে। সরকারি সহায়তা ও ভর্তুকি পেলে অনেক উপকৃত হবেন বলে তিনি জানান।

অপর ব্যবসায়ী আজিজুল বলেন, ২০১২ সাল থেকে মুরগির খামার শুরু করি আগে টোলের পরিমাণ কম ছিল এখন একই গাড়িতে ৩-৪ স্থানে অতিরিক্ত টোলা আদায় করা হয় বিধায় ব্যবসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ আলী বলেন, পৌরসভার টোল আদায়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে, শিডিউলের বাইরে মনগড়া মতো টোল আদায়ে করা উচিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

মাটিরাঙ্গা ইউএনও ডেজী চক্রবর্তী বলেন, ওই এলাকার পোল্ট্রি খামারিদের উন্নয়নে সবকিছু করা হবে। অতিরিক্ত টোল আদায় সংক্রান্ত সমস্যা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১০

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১১

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১২

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৩

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৪

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৫

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৬

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

১৭

বিসিবির দুর্নীতির তদন্ত দাবি সাবেকদের

১৮

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১৯

জেল খেটেছি তবু শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাইনি : সাবেক এমপি হাবিব

২০
X