ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ধলার মোড়ের কাছে পালডাঙ্গীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। একরাতের মধ্যেই শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন দশ-বারোটি বসতবাড়ি ধসে গেছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গীতে বাঁধসংলগ্ন বাসিন্দারা ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকের রান্নাঘর ভাঙনে বিলীন হওয়ায় তারা নিত্যকর্মও সারতে পারছেন না। বাড়িতে রান্নাবান্না করতে না পারায় এসব পরিবার সারাদিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ঘরের মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এর আগে একই দিন ভোরে ভাঙনের কবলে পালডাঙ্গী এলাকার ১০-১২টি বসতবাড়ি ধসে যায় বলে জানা যায়।
এদিকে শহর রক্ষা বাঁধের সন্নিকটে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে গড়ে করা হয়েছে বিশাল মজুদ।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে ভেকু দিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালু তুলে মজুদ করা হয়। এরপর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ভেকু দিয়ে ওই বালি ট্রাকে করে বিক্রির সময় শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় পানির ঘূর্ণি স্রোতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে মাঝরাত হতে ভোর হওয়ার আগেই আফজাল শেখ, মজলু শিকদার, মো. হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ, আলী, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ, জাহানারা বেগমের ঘরবাড়ি নদীর পানিতে ধসে যায়।
ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মো. হাসান মাস্টার বলেন, ৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা এই বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে আশ্রয় নিই। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। কিন্তু এখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। সেই ভাঙনে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু ফকির বলেন, অনেকদিন ধরে বালুখেকোরা মানুষের ক্ষতি করছে। যখন আমরা অভিযোগ দিই, তারপর দুই তিনদিন হয়তো বন্ধ থাকে। পরে আবার শুরু হয়। তবে এবার তারা যা করছে তাতে বেড়িবাঁধ ধসে গেছে। আর মাত্র চার-পাঁচ ফুট ভাঙলেই শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন ধরে যাবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা কালবেলাকে বলেন, খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে। আর সেখানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।