মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে টিকতে না পেরে সীমান্ত পেরিয়ে আবারও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা।
গেল দুই দিনে প্রায় দেড় শতাধিক বিজিপি সদস্য টেকনাফে পালিয়ে এসে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। টেকনাফের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে ধাপে ধাপে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন তারা।
এর মধ্যে গত বুধবার (১০ জুলাই) সকালে ২০ জন এবং বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ১১৯ মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
যদিও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি বিজিবি কিংবা কোস্টগার্ডের সদস্যরা। তারা বলছেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থান রয়েছে।
তথ্য বলছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সে দেশের সামরিক জান্তা বাহিনীর সংঘাত চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইনের সীমান্ত শহর মংডু টাউনশিপ দখলে নিতে হামলা শুরু করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এতে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। ইতোমধ্যে মংডু জেলার অধিকাংশ এলাকা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা একাধিক রোহিঙ্গা সদস্য জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপ ঘিরে ফেলেছে। যেকোনো সময় তারা শহরটির দখলে নিতে পারে। এ অবস্থায় দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে টেকনাফের সীমান্ত এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছে। আরাকান আর্মির তীব্র হামলায় টিকে থাকতে না পেরে মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন।
টেকনাফ স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিন ধাপে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও নাজিরপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্যরা নাফ নদী পার হয়ে অনুপ্রবেশ করেন। পরে তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা হেফাজতে নেন। কিন্তু এ বিষয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে বুধবারও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষিবাহিনী অনুপ্রবেশ করেছে।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলেন, আমার ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে বিজিপির সদস্যরা অনুপ্রবেশ করেছে। বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাদের নিরস্ত্র করে আশ্রয় দিয়েছে। তবে কতজন আশ্রয় নিয়েছে তা কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য এপারে আশ্রয় নিয়েছে বলে শুনেছি। তারা বিজিবি ও কোস্টগার্ডের হেফাজতে রয়েছে। তবে কতজন অনুপ্রবেশ করেছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। এ নিয়ে হয়তো বিজিবির পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবির) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যা হচ্ছে তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমার দেশের নিরাপত্তায় সীমান্তের স্থল ও জলসীমায় সার্বক্ষণিক বিজিবির সদস্যরা টহল দিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবির সদস্যরা সদা প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, সীমান্তের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এটি বিজিবি বলতে পারবে। তবে টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।
মন্তব্য করুন