সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসিসহ) ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে একজন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার জাহিদুল ইসলাম। তিনি শম্ভুপুর ইউনিয়নের চর কোড়ালমাড়া ইয়াসিনগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মান্নান মাস্টার বাড়ির আবদুল লতিফের ছোট ছেলে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) সরেজমিনে জাহিদুলের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে পাঁচটি টিনের ঘর। এর মধ্যে জাহিদুলের ঘরটি পুরোনো টিনের। বারান্দায় একটি সোফা ও একটি নতুন খাট ছাড়া তেমন দামি কোনো আসবাব নেই। বাড়িতে মা-বাবা, ছোট বোন ও মেঝ ভাইয়ের স্ত্রী থাকেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জাহিদুলরা চার বোন ও তিন ভাই। ভাইদের মধ্যে জাহিদুল সবার ছোট। ছোটবেলায় জাহিদুল প্রথমে লালমোহন উপজেলার রায়চাঁদ এলাকার একটি মাদ্রাসায় হাফেজি পড়েছেন। কিন্তু পারিবারিক নানা কারণে পড়া শেষ করতে পারেননি। পরে লালমোহনের ডাওয়ারী মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও পরে লালমোহন কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। বর্তমানে লালমোহন কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
জাহিদুলের বড় বোন মায়ানুর বেগম বলেন, জাহিদুল আমার ছোট ভাই। পড়াশোনা করার জন্য দুই বছর আগে ঢাকায় পাঠাই ওকে। ঢাকায় মিরপুর এলাকায় থেকে পড়াশোনা করত। পরে জানতে পারি, পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করে, কিছুদিন আগে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে শুনতে পাই আমার ভাই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, জাহিদুল ইসলামকে জুয়েল নামে জানে সবাই। দুই বছর ধরে বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস ও চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন সময়ে এলাকার মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিত। বাড়িঘরের অবস্থা নাজুক হলেও এলাকায় জাহিদুলের চলাফেরা ছিল বড়লোকের ছেলেদের মতো। তার কথায় সহজে মন গলে যেত। এ সুযোগে সে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়া ও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার আত্মীয়-স্বজনও তার প্রতারণা থেকে রেহাই পায়নি। বিভিন্ন সময় তার ফেসবুক আইডি থেকে চাকরির আবেদন পোস্ট করে প্রলোভন দেখাত। তবে পাওনাদারদের ভয়ে এক বছর ধরে ঠিকমতো বাড়ি ফেরে না সে। ফিরলেও রাতে এসে ভোরেই চলে যান।
প্রতিবেশী শাহাবুদ্দিন জানান, জাহিদুল ইসলাম ওরফে জুয়েল চাকরি দেবে বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তাই তার গ্রেপ্তারে এলাকার অনেকেই আনন্দিত। টাকা ফেরত না পেয়ে আবুল কাশেম নামের এক ভুক্তভোগী মামলাও করেছেন জাহিদুলের নামে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, জাহিদুল এক বছর আগেও এলাকার মানুষজনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছে। এরপর থেকে সে উধাও হয়ে যায়। এখন বাড়িতেও আসে না।
মন্তব্য করুন