সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন উঠানে। হঠাৎই সিঁড়ির নিচে কিছু একটা নড়তে দেখে এগিয়ে যান। হাতে থাকা স্মার্টফোনের টর্চ জ্বালালে সহজেই টের পান এটা বিষধর রাসেল ভাইপার। তারপর চেঁচামেচি করে কয়েকজনকে ডেকে কাদালের (বাঁশের লাঠি) সাহায্যে পিটিয়ে হত্যা করেন সাপটিকে। স্থানীয়রা সাপটির গলায় দড়ি পেঁচিয়ে মোড়ের বটগাছে ঝুলিয়ে রাখে ঘণ্টাখানেক।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত ৮টায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীর পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দয়রামপুর ফকির পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা বনবিভাগ কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, এভাবে একটি জীবকে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝোলানো আইনবিরোধী ও ন্যক্কারজনক। গ্রাসবাসীরা বলছেন, সাপটি ভয়ংকর ও বিষধর হওয়ায় লোকজনের মাঝে পরিচিত করতে এবং সকলকে সচেতন করতে গাছে ঝোলানো হয়েছে।
রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের চারটি মারাত্মক বিষধর সাপের একটি। চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমটক্সিক, যার প্রভাবে লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হয়। এবং দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে ব্যর্থ হলে ফুসফুস, কিডনি ও হৃদযন্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
সম্প্রতি বর্ষার পানিতে নদী-নালা খাল বিল ভোরে ওঠায় প্রায়ই লোকালয়ে দেখা মিলছে বিষধর সাপটির। পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায় দয়রামপুরেও সাপটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন জানা গেছে, রাত ৮টার দিকে দয়রামপুর ফকির পাড়ার হাসেন শেখের ছেলে মো. হাসান শেখ নিজ বাড়িতে সিঁড়ি দিয়ে উঠানে নামছিলেন। সিঁড়ির নিচে সাপটিকে দেখতে পেয়ে কয়েকজন প্রতিবেশীর সহযোগে বাঁশের লাঠি দিয়ে হত্যা করে সাপটিকে। পরে স্থানীয়রা সাপটিকে প্রথমে মোড়ের বটগাছে এবং পরে ঘোষপাড়া মোড়ের বাঁশ বাগানে ঝুলিয়ে রাখে। পেটে বাচ্চা আছে কিনা জানতে বাটাল দিয়ে পেট চিরে দেখা হয়।
এ বিষয়ে হাসান শেখ জানান, ঘরের সিঁড়ি দিয়ে উঠানে নামতে প্রায় সাড়ে তিন ফিট লম্বা একটি সাপ দেখতে পাই। তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডেকে লাঠি দিয়ে মারা হয় সাপটিকে। পরে বুঝতে পারি সাপটি ছিল ভয়ংকর রাসেল ভাইপার।
বটতলা এলাকার বাসিন্দা চুন্নু মিয়া জানান, এলাকায় রাসেল ভাইপারের দেখা মেলার বিষয়টি জনমনে ভয়ের পাশাপাশি সচেতনার সৃষ্টি করবে। সাপটিকে সবার কাছে পরিচিত করতে এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই ঝোলানো হয়েছে।
এদিকে বাড়ির উঠানে সিঁড়ির নিচে বিষধর রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি জনমনে ভীতির সৃষ্টি করেছে। দয়রামপুর ঘোষপাড়ার একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এত দিন শুধু টেলিভিশন বা সংবাদপত্রেই দেখেছি। এখন রাসেল ভাইপার আমাদের ঘরের সিঁড়ির নিচে পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে আমরা খুব শঙ্কিত।
মন্তব্য করুন