চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে রুটিন অনুযায়ী বিজ্ঞানবিভাগের পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষার কেন্দ্রে পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র ইংলিশ ভার্সন এলেও বাংলা ভার্সনে প্রথম পত্রের জায়গায় দ্বিতীয় পত্র চলে আসে।
পদার্থ বিজ্ঞানের নৈবিত্তিক (এমসিকিউ) শেষ হওয়ার পরে যখন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন দিতে আসে তখনই শুরু হয় বিপত্তি। এ নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মাঝে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিক কেন্দ্র সচিব বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে দ্রুত পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেন। পরে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে প্রশ্নপত্র নিয়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়। এ কারণে পদার্থ বিজ্ঞানের বাংলা ভার্সনের ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেড় ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বিজয় সরণি কলেজে ঘটনাটি ঘটেছে। প্রশ্নপত্র ভুলের বিষয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিজয় সরণি কলেজের অধ্যক্ষ কেন্দ্র সচিব শিব শংকরশীল ও পরীক্ষা কমিটির প্রধান মো. আব্দুল্লাহ আল নোমানকে চলমান পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নতুন করে পরীক্ষা কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজয় সরণি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা জামালকে।
এদিকে প্রশ্নপত্র ভুলের বিষয়ে জানত না অধিকাংশ অভিভাবকরা, পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও ছাত্রছাত্রীরা বের না হওয়ার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েন অভিভাবকরা।
অভিভাবক নমিতা দাস বলেন, আমরা অভিভাবকরা দীর্ঘ আগ্রহের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রের গেটের বাইরে বসে আছি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও মেয়ে না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। প্রশ্নপত্রের ভুলের বিষয়টি অভিভাবকদের জানালে ভালো হতো।
শাহিন নামের আরেক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, প্রশ্নপত্র ভুলের কারণে আমরা ছেলের পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে চিন্তিত। হয়ত এ পরীক্ষা আবারও হতে পারে।
অন্য এক অভিভাবক বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে একটি ট্রাংকে করে হঠাৎ কিছু নিয়ে যেতে দেখলাম। কিন্তু কী নিয়ে যাচ্ছে সেটা জানি না। এখন মনে হচ্ছে যে প্রশ্নপত্রটি ভুল এসেছিল, সেই প্রশ্নপত্রই ডিসি অফিসে নিয়ে যাচ্ছিল।
বিজয় সরণি কলেজের গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার মেয়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কী কারণে পরীক্ষার হল থেকে বের হতে দেরি হচ্ছে জানি না। আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
এদিকে ভুল প্রশ্নপত্রের বিষয়ে জানার জন্য পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ও ভাটিয়ারী বিজয় সরণি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রিন্সিপাল শিব শংকর শীলের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
পরীক্ষার কেন্দ্র প্রধান বিজয় সরণী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, প্রশ্নপত্র ভুল জানার পরে পুনরায় ডিসি অফিসের ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র আনা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রীদের দেড় ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিজয় সরণি কলেজের সরকারি অধ্যাপক আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা জামাল বলেন, ভুলটা কোথায় তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র নিয়ে আসার সময় খুলে দেখার কোনো সুযোগ নাই। কর্তৃপক্ষ যা দেয় তাই আমাদেরকে নিয়ে আসতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নপত্র ভুলের ঘটনায় ইতোমধ্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, অন্যটি উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়। এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রীদেরকে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেড় ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুজন সদস্য হলেন- মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুস্তাফা আলম সরকার ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাবিবুল্লাহ।
ইতোমধ্যে পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ও বিজয় সরণি কলেজের অধ্যাপক শিব শংকর শীল ও পরীক্ষা কমিটির প্রধান আব্দুল আল নোমানকে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে পরীক্ষা কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজয় সরণি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা জামালকে।
মন্তব্য করুন