তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) টার্মিনালে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বুধবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে কুমিল্লায় গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে কলকারখানায় উৎপাদনের পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় নগরীর বাসাবাড়িতে কোথাও চুলা জ্বলেনি।
ফলে নগরবাসীকে হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাস মিলছে না। ফলে সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল কমে গেছে।
এদিকে ঠিক কখন গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে সে সম্পর্কে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্যাস স্বাভাবিক না হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় আছেন গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মর্তুজা রহমান খান কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এলএনজি রূপান্তরের টার্মিনালে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টার মধ্যে ওই সংকট কাটিয়ে ওঠার কথা রয়েছে।
বিজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে কুমিল্লায় তীব্র গ্যাস সংকট রয়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকরা এমনিতেই ক্ষুব্ধ। তার ওপর বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দিনব্যাপী একদমই গ্যাস না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে।
নগরের আশরাফপুর এলাকার বাসিন্দা তানজিমা তন্নি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানাতে গিয়ে দেখি গ্যাস নেই। বাসায় মেহমান আছে। এভাবে হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছি। বছরের পর বছর কুমিল্লায় গ্যাসের সংকট। অথচ এই সংকট দূরীকরণে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় রান্নাবান্না করতে পারিনি। তাই হোটেল থেকে উচ্চ দামে সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার এনেছি।
নগরের দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা শারমিন বলেন, গ্যাস সরবরাহ কোনো কারণে বন্ধ হলে, সেটা আগে থেকে জানানো উচিত। গ্রাহক তাহলে নিজেদের মতো ব্যবস্থা করতে পারে। হঠাৎ গ্যাস চলে যাওয়ায় রান্না নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি। চুলায় গ্যাস না থাকার কারণে মাটির চুলা বানিয়ে তাতে রান্না করি। কখনো সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করি। এভাবে প্রতিনিয়ত খরচ বাড়ছে। সামনে গ্যাসের দামও বাড়বে বলে শুনেছি।
বিজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মর্তুজা রহমান খান বলেন, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা থেকে ২৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। ওই গ্যাসের মধ্যে ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসবিদ্যুৎ খাতে ও ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালি খাতে সরবরাহ করা হয়।
বিজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, বিজিডিসিএল কুমিল্লার আওতাধীন বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার মধ্যে ৪ লাখ ৮৮হাজার ২৮টি গৃহস্থালি গ্যাসের সংযোগ আছে। এখানে ৯১টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ৫৭৫টি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ১ হাজার ৫৬৩টি হোটেল-রেস্তোরাঁ, ৮১টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১৮৪টি শিল্পকারখানা, একটি সার কারখানা ও ১৪টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে।
মন্তব্য করুন