হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, হ্যাকার হতে চেয়েছিলেন সোহাগ মিয়া।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে সিলেট শহরের একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চুনারুঘাট থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম যৌভাবে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে। সে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মোবারকপুরের মন্তাজ মিয়ার ছেলে। এ বিষয়ে বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
পুলিশ সুপার জানান, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে অজ্ঞাতনামা স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মোবাইল ফোনে জানায়, তার জীবনের ঝুঁকি আছে এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য তার কাছে রয়েছে। এ ব্যাপারে ২৮ জুন চুনারুঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এ ছাড়াও গত ২৯ জুন রাতে ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানায় ব্যারিস্টার সুমন নিজে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
জিডিতে ব্যারিস্টার সুমন উল্লেখ করেন, গত ২৭ জুন ঢাকায় অবস্থানকালে দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার সময় তার নির্বাচনী এলাকা চুনারুঘাট থানার ওসি তার সরকারি মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে জানান, ‘আপনাকে হত্যার জন্য অজ্ঞাতনামা একটি শক্তিশালী মহল গত তিন দিন আগে ৪-৫ জনের একটি দল নিয়ে মাঠে নেমেছে। আপনি রাতে বাইরে বের হবেন না এবং সাবধানে থাকবেন।’
তিনি জিডিতে আরও উল্লেখ করেন, ‘তখন আমি ওসির কাছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে ওসি ওই ব্যক্তির পরিচয় জানাতে অস্বীকার করেন এবং আমাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন। বিষয়টি জানার পরে আমি মারাত্মকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
পরে পুলিশ, ডিবি ও সিটিটিসি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশকে সোহাগ মিয়া জানায়, সে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ২০১১ সালে কাজের জন্য বিদেশ যায়। ২০১৮ সালে দেশে আসে। দালালের মাধ্যমে পর্তুগাল পাঠাবে বলে তার এলাকার ১২ জনের কাছ থেকে ৮/১০ লাখ টাকা করে নিয়ে আত্মসাৎ করে ভারতে পালিয়ে যায়। পরে দেশে এসে টাকার অভাবে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করে এবং ইন্টারনেট হতে হ্যাকিং এর বিষয়ে ধারণা নিতে গিয়ে ডার্ক ওয়েবের সঙ্গে পরিচয় হয়।
সে এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ভারতীয় একটি গল্প পড়ে। যাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তার জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি তার নজরে আসে। পরে সে এই গল্পের আলোকে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে কৌশল খাটিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
কিন্তু এমপি ও তার পিএসএর কোনো নম্বর না থাকায় ওয়েবসাইট থেকে চুনারুঘাট থানার ওসির নম্বর সংগ্রহ করে হত্যার হুমকির ম্যাসেজ পাঠিয়ে এবং ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। পরে ওসির মাধ্যমে সে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে কথা বলে তাকে জানায়, ৪/৫ জনের একটি দল তাকে হত্যা করার কিলিং মিশনে নেমেছে। তার ইচ্ছা ছিল, এমপি সুমন অথবা তার পিএস তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য নিতে আসবে তখন সে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করবে।
কিন্তু এমপি সুমন বিষয়টি জানার পর ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিকার চান এবং জিডি করেন। এতে করে তার নির্বাচনী এলাকায় শুরু হয় আন্দোলন। পরে সোহাগ মিয়া ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যায়। সেখানে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে বুঝতে পেরে সিলেটে চলে আসে। পরে নবীগঞ্জের একটি মামলার সূত্র ধরে তার পাসপোর্ট পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সোহাগ মিয়া একজন প্রতারক ও অনলাইন জুয়াড়ি। তার বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানা ও মৌলভীবাজারের রাজনগর থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে। সে দুই বিয়ে করেছে এবং একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। অভাব অনটন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর জন্য টাকা আত্মসাৎ করে। এই প্রতারকের সঙ্গে আর কেউ জড়িত নেই বলে পুলিশ সুপার জানান।
এই হুমকিকে কেন্দ্র করে দুদিন আগে ব্যারিস্টার সুমনের জন্য গানম্যান নিয়োগ করে জেলা পুলিশ প্রশাসন। এই গানম্যান অব্যাহত থাকবে কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, আপাতত গানম্যান থাকবে। পরে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন