মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সাংবাদিকের ওপর হামলা

জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেলের বিরুদ্ধে শোকজের নির্দেশ

রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেল। ছবি : সংগৃহীত
রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেল। ছবি : সংগৃহীত

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার রফিকুল ইসলামকে মারধর করার অভিযোগে রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলকে শোকজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে মহানগর উত্তর দক্ষিণের যৌথসভার আগে আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে শোকজ করার নির্দেশ দেন তিনি। সাংবাদিকের ওপর হামলা করায় দুঃখ প্রকাশও করেন ওবায়দুল কাদের।

এর আগে সোমবার (৮ জুলাই) আ.লীগ সভাপতি রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে যান সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম। এ সময় তার ওপর অতর্কিত হামলা করে রাসেল এবং তার সঙ্গে থাকা ক্যাডার বাহিনীর কয়েকজন সদস্যরা। কিল ঘুষিসহ মারপিট করতে থাকে তাকে। পরে আ.লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা এগিয়ে আসার পরে রাসেল তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে সরে যায়। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদও জানায়।

জানা যায়, মাহমুদুল আসাদ রাসেল রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও বসবাস করেন ঢাকায়। সর্বক্ষণিক অবস্থান করে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেন বিশেষ প্রটোকল। এই নেতার ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছেন বিশেষ প্রটোকল বাহিনী। এই বাহিনীর মাধ্যমে চলে তার মাস্তানি। তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য, পদ বাণিজ্য, কুইন সাপ্লাই, পাটি অফিসে আগত নেতাকর্মী ও কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুরব্যবহার এবং সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এক সময় ছাত্রদল করা মাহমুদুল আসাদ রাসেল কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রটোকল দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রটোকল আর নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়ে দরিদ্র পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা রাসেল এখন অঢেল সম্পদের মালিক।

জেলা আ.লীগের সদস্য, নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক নেতা কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে আ.লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যেখানে আমি রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্য। সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছে রাসেল। আসলে অযোগ্যরা পদে আসলে এমনই হয়। শুনেছি সাংবাদিককে মেরেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাসেলসহ সকলের শাস্তির দাবি জানাই এবং যে ছেলেটা কখনো জেলার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলো না। কীভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পেলো কেন্দ্রীয় নেতাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলা আ.লীগের নেতা কালবেলাকে বলেন, জেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে হঠাৎ করেই সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন রাসেল। এর আগে রাজবাড়ীর রাজনীতিতে তাকে কখনো দেখা যায়নি। এবং পদ পাওয়ার পরও তাকে রাজবাড়ীর রাজনীতিতে এখনও দেখা যায় না। আ.লীগের কোনো প্রোগামে জেলায় রাসেলের দেখা যায় না। সে সর্বক্ষণ ঢাকায় অবস্থান করেন। রাসেল পদ পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের আ.লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনারও সৃষ্টি হয়। ঢাকায় আ.লীগের পাটি অফিসে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় রাসেলের বিরুদ্ধে শোকজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকের ওপর হামলা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একজন প্রকৃত নেতা কখনো সাংবাদিকের ওপর হামলা করতে পারে না। আমরা এ ঘটনায় মাহমুদুল আসাদ রাসেলের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

আর এ দিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাহমুদুল আসাদ রাসেল প্রতারণামূলক কথোপকথনের মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী নারী ওয়াওয়েনসে মারমা সুমা উল্লেখ করেন, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় রাসেলের সঙ্গে। তিনি আমাকে বলেন যে, আমার কন্যা নিনিউ মারমা (পিংকি)- তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক, হিসেবে চাকরিতে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়ে দিবে। এজন্য তাকে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা প্রদান করি। তবে চাকরি দিতে পারেনি রাসেল। পরে টাকাগুলো ফেরত চাইলে আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়। এবং সে নিজেকে ওবায়দুল কাদেরের প্রটোকল অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয়। এজন্যই আমি আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করি।

বিশ্বস্ত সূত্রে কালবেলাকে জানায়, এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও ভুয়া ছাত্র পরিচয়ে মুহসীন হলে থাকতো রাসেল। ছাত্র হলে ফ্রি খাওয়া থেকে শুরু করে ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছিনতাই করে ধরা পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে গণপিটুনিতে মাথায় চরম ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো সে। তখন কিসলু রাসেল নামে সে পরিচিত ছিলো। এ ছাড়াও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকাও অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে সে আ.লীগের শীর্ষ নেতার নাম পরিচয় ব্যবহার করে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছে কিন্তু বাস্তবে তার কোনো আয়ের উৎস নাই, এমনকি পারিবারিকভাবে দরিদ্র ঘরের সন্তান তিনি।

এ ছাড়াও ঢাকার আজিমপুর ইরাকী মাঠের পাশে দুইটা ফ্ল্যাট, কামরাঙ্গীচরে জমির খোঁজ পাওয়া গেছে, ব্যক্তিগত দামি গাড়িতে চলাফেরা। আ.লীগের শীর্ষ নেতার নাম ব্যবহার করে মনোনয়ন বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। দলের শীর্ষ এক নেতার প্রোটোকল ও অনৈতিক কাজের সহযোগিতা করে রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এবং পদ নেওয়ার পর থেকে রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের সঙ্গে তার ন্যূনতম কোন সম্পৃক্ততা নাই, আ.লীগের কর্মসূচিতে তাকে ঢাকাতেই দেখা যায়। এবং তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ আছে বলে জানা গেছে।

সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ক্ষমা চেয়েছেন মাহমুদুল আসাদ রাসেল। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ আ.লীগের অফিসে সব সময়ই সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সম্মান করে থাকি। আমরা যারা এই অফিসে নিয়মিত যাই তারাও এই বিষয়টা মাথায় রাখি। ৮ জুলাই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমার আচরণে কোন সাংবাদিক ভাই যদি ব্যথিত হয়, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে কোনোদিন যাতে এমন কিছু না ঘটে আমি সতর্ক থাকব।

হামলার শিকার সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম জানান, কোনো ধরনের কথাবার্তা ছাড়াই রাসেল ও তার ক্যাডার বাহিনী আমাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুসি দিতে থাকে। এ সময় উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। পরে আ.লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা এগিয়ে আসার পরে রাসেল তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে সরে পড়ে। এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে রফিকুল বলেন, এ ঘটনা আ.লীগের দপ্তর এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে।

তবে শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ী জেলা আ.লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম সোহাগ কালবেলাকে জানান, আমি এখন পর্যন্ত এরকম কোন নোটিশ বা কাগজপত্র পাই নাই। আমি এটা প্রথম শুনলাম। এখন পর্যন্ত আমরা এ বিষয়ে কোনো কিছু পাই নাই। যদি পাই তাহলে অবশ্যই জানাবো।

বাংলাদেশ আ.লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান কালবেলাকে জানান, এ ঘটনায় রাজবাড়ী জেলা আ.লীগকে মেসেস দেওয়া হয়েছে। জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলের বিরুদ্ধে শোকজের নির্দেশনা আসছে আমরা নির্দেশনা জেলায় পৌঁছে দিয়েছি। আমরা মেসেস দিয়ে নির্দেশ দিয়েছি রাজবাড়ী জেলা আ.লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। এখন এ বিষয়ে জেলা থেকে নোটিশ পাঠাবে কেন্দ্রে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিখোঁজের একদিন পর নদীতে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

১৭ সেপ্টেম্বর : নামাজের সময়সূচি

আত্মগোপনে ঠিকাদার, ব্রিজ নির্মাণে কাজ করছেন স্থানীয়রা

শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা

তেঁতুলিয়ায় আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন

কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

সাব্বির-আফনান হত্যা মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

ভিনদেশি গ্রেটার ফ্লেমিংগো পাখির দেখা মিলল পঞ্চগড়ে

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে পিআইও বিজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ

দুই ছেলের মারধরে মারা গেলেন বাবা

১০

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে গুলশানে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

১১

কুয়েতে বাংলাদেশি যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু

১২

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী রনি পেল হুইল চেয়ার

১৩

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

১৪

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

১৫

শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

১৬

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

১৭

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

১৮

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

১৯

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

২০
X