মা আতশি রানীর হাত ধরে আট বছরের শিশু মণিকাও রথযাত্রায় গিয়েছিল। সেখানে বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আতশি রানী। মায়ের হাত থেকে ছিটকে পড়ে প্রাণে রক্ষা পায় শিশু মণিকা। মায়ের সৎকার হয়েছে। মণিকা এখনো জানে না তার মা মারা গেছে। সারাক্ষণই সে মাকে খুঁজে ফিরছে। মণিকার বাবা লঙ্কেশ্বর পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগালি (সহকারী)।
মণিকার বড় বোন কণিকা রানী বলেন, মণিকাকে মায়ের মৃত্যুর ঘটনা জানানো হয়নি। সে সব সময় মাকে খুঁজে ফিরছে।মাকে হারিয়ে শিশুটি নির্বাক হয়ে রয়েছে। কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলছে না।
এদিকে বগুড়ায় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পর্শে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা প্রদানের মাধ্যমে নিজ হাতে সকলকে আর্থিক সহায়তার নগদ অর্থ তুলে দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
গত রোববার বিকেলে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আমতলী এলাকায় পৌঁছালে রথের চূড়ায় থাকা ধাতবের সঙ্গে বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে যায়। এসময় বেশ কয়েকজন ভক্ত পুণ্যার্থী বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে আহত হন। তাদের মধ্যে ৫ জন মারা যান এবং আহত হন প্রায় ৪৫ জনের মতো, যাদের মাঝে এখনো চিকিৎসাধীন ২৭ জন।
অনুষ্ঠানে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার এবং আহতদের মাঝে চিকিৎসাধীন ২৭ জনের পরিবারের সদস্যদের হাতে ৫ হাজার টাকা করে তুলে দেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে যাদের আর্থিক সচ্ছলতা নেই তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ ১৪ কেজির খাদ্যসামগ্রী প্রদানেরও কথা বলেন তিনি। এসময় বেশ কয়েকটি পরিবারের মাঝে নগদ অর্থের পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রীও তুলে দেওয়া হয়।
এসময় জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম রথযাত্রা শুধু নয়, যেকোনো ধর্মীয় উৎসবের আগেই তাদেরকে অবগতকরণের মধ্য দিয়ে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে আহ্বান জানান। এ ছাড়াও আগামী ১৫ জুলাই উল্টো রথ যাত্রার আগে বৈঠকেরও সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিমের সঞ্চালনায় এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন, শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহসিয়া তাবাসসুম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাগর কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক নির্মল রায়, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ, গোপাল তেওয়ারি প্রমুখ।
মন্তব্য করুন