মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি এলাকায় ১৭নং কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ একতলা ভবনে শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সরেজমিনে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে কাঞ্চনপুর এলাকার তৎকালীন সময়ের জমিদার রাধা গোবিন্দ বাবু ১৯৪০ সালে কাঞ্চনপুর গ্রামে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনের কবলে পরে কাঞ্চনপুর এলাকা সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে ইউনিয়নের গৌরবিরদিয়া এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়।
এক সময় নদীভাঙনের কবলে গৌরবিরদিয়া এলাকাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে কোটকান্দি গ্রামে আনা হয়। সে জায়গাও নদীতে বিলীন হলে ১৯৯৬ সালের দিকে একই গ্রামের শেষ মৌজায় ৮ শতাংশ জায়গা কিনে তার ওপর টিনের ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। ১৯৯৭ সালের দিকে টিনের ঘরের পরিবর্তে ওখানেই চার রুম বিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মাণ করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। দিনে দিনে বিদ্যালয়ের ভবনটি সাদা রঙ বিবর্ণ হতে থাকে এবং আস্তে আস্তে খসে পরতে থাকে দেয়ালের পলেস্তারা। কোথাও কোথাও ভবনের দেয়াল ও ছাদের নিচের অংশসহ অনেক পিলারেরও পলেস্তারা খসে রড বের হয়েও এসেছে। এ ছাড়াও ভবনের বিমেরও কোথাও কোথাও রড বের হয়ে এসেছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে ঝুঁকি নিয়েই ক্লাশ করছে শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ভবনটি সঙ্গেই দোচালা ৫ রুমের একটি ঘর নির্মাণ করা হলেও অত্যধিক গরমের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করতে না পারায় জরাজীর্ণ ভবনেই ক্লাশ করতে দেখা যায়। বিদ্যালয়টির জায়গার অভাবে সামনে নেই আঙিনা, নেই কোনো খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ের এক কোণে ছোট পরিসরে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। আঙিনা না থাকার ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অবসর সময় কাটে ক্লাস রুমেই।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র স্বাধীন ইসলাম জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে পড়ছে। আমরা অনেক ভয়ে ভয়ে ক্লাস করি। আমাদের ক্লাসরুমে ফ্যানের অভাব। এতে করে গরমে আমরা ক্লাস করতে পারি না। আমাদের এখানে টয়লেটের সমস্যা। টয়লেট করার কোনো জায়গা নেই। আমরা অনেক সমস্যা নিয়ে এখানে পড়াশোনা করছি। আমাদের খেলাধুলার মাঠ নেই। ফলে আমরা খেলাধুলাও করতে পারি না। আমাদের ক্লাস রুমেই বসে থাকতে হয়।
সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের সমস্যার শেষ নেই। মূল সমস্যাই হলো জায়গার। মাত্র ৮ শতাংশ জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি। জায়গার কারণে আমরা নতুন ভবন পাচ্ছি না। পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমাদের ক্লাস করাতে হচ্ছে। একটা টয়লেট নেই। টয়লেট করার জায়গাও নেই। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ এলাকার দানবীর ব্যক্তিবর্গের নিকট জোর দাবি করব, ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে হলে আগে একটু জায়গার প্রয়োজন। যাতে করে আমরা অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো ভবন পেতে পারি।
প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন জানান, বর্তমান ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ। ভবনের বিভিন্ন পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। বছর তিনেক আগে একবার মেরামত করা হলেও এখন অবস্থা আরও খারাপ। ২০১৮ সালে একটি টিনসেড ঘর তোলা হলেও সেখানে রোদের সময় বাচ্চারা থাকতে পারে না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ও এখানেই ক্লাস নেওয়া হয়। আমাদের মূলত যে জায়গাটুকু দরকার তা এখানে নেই। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। খেলার মাঠ নেই, ওদের চলা ফেরার জন্য আঙিনা নেই। কোনো অনুষ্ঠান করতে পারি না। সবমিলিয়ে একটা হযবরল অবস্থায় আছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, বিদ্যালয়টির সার্বিক বিষয়ের ওপর নজর দিয়ে সকল সমস্যা সমাধানের যেন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে দুই দিন পরেই প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে মাসিক মিটিং আছে। সেখানে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেব। শুধু এটাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ যেসব ভবন আছে তার একটা তালিকা তৈরি করে যতদ্রুত, যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব, আমি প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
আর্কাইভ 
| ১১ এপ্রিল ২০২৫ 
