আফ্রিকার ফল ড্রাগন এখন ঝিনাইদহের মহেশপুরের মাঠে মাঠে। ফলে সেখানকার চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ড্রাগনের মাঠে। উপজেলার বেলেমাঠ বাজারে বসে ড্রাগন ফলের বাজার। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ড্রাগন চাষিরা বেলেমাঠ বাজারের আড়তে নিয়ে আসছেন তাদের ড্রাগন ফল বিক্রি করতে। প্রতিদিন এ বাজার চলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। এ বাজারে দিনে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয় বলে জানান ড্রাগন ফল ব্যবসায়ীরা। এতে চলতি মৌসুমে এবার মহেশপুর উপজেলায় ২শ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা করছেন ড্রাগন চাষিরা।
ড্রাগন চাষিদের ভাষ্য মতে- মহেশপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠে মাঠে বাড়ছে ড্রাগনের চাষ। লাভ বেশি হওয়ায় এলাকার কৃষকরা ড্রাগন চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মহেশপুর উপজেলায় ৩১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। এ বছরে ২শ কোটি টাকার ড্রাগন ফল উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
শখের বসে ২০১৬ সালের দিকে মহেশপুরের আজমপুর এলাকায় কয়েক জন ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। তাদের দেখে আজ মহেশপুরে প্রায় সবাই চাষ করছেন ড্রাগন ফলের। ড্রাগন চাষে লাভ বেশি হওয়ায় এলাকার চাষিরা অন্য চাষ বাদ দিয়ে এখন ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
ড্রাগন চাষি আক্তার বিশ্বাস জানান, ২০১৭ সাল থেকে তিনি ড্রাগন চাষ শুরু করেন। প্রথমে তিনি এক বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান করেন। পরে তিনি সাত বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেন। বাগানের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফলের উৎপাদনও বাড়তে থাকে।
হামিদপুরের কৃষক রাজিব আহাম্মেদ জানান, প্রথমে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান করতে ব্যয় হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে ও ফল যদি ভালো হয় প্রথম বছরেই ব্যয়ের টাকা ওঠানো সম্ভব।
গৌরীনাথপুর গ্রামের ড্রাগন চাষি মফিজুর রহমান জানান, দুই বছর আগে ড্রাগন চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার ১৫ বিঘা ড্রাগন ফলের চাষ রয়েছে। এ বছর বৃষ্টি কম ও প্রচণ্ড গরমে ফল কম এসেছে।
এখন মহেশপুরের গৌরীনাথপুর, আজমপুর, বিদ্যাধরপুর, মালাধরপুর, বলিভদ্রপুর, রামচন্দ্রপুর, কাশিপুর, নওদাগ্রাম, বেলেমাঠ, বাথানগাছি, শংকরহুদা, কালুহুদা, জুকা গ্রামজুড়ে শুধু ড্রাগন ফলের বাগান।
বেলেমাঠ ড্রাগন বাজারের সভাপতি জাকির হোসেন জানান, আমাদের বাজারটা নতুন। সে হিসেবে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ ড্রাগন ফলের বাজার। শুধু মহেশপুর না বিভিন্ন এলাকার ড্রাগন চাষিরা তাদের ড্রাগন ফল এ বাজারে নিয়ে আসে বিক্রির জন্য।
বেলেমাঠের ড্রাগন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, এ বাজারে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন ড্রাগন চাষিরা। এ বাজার থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আশা ড্রাগন ব্যবসায়ীরা ড্রাগন ক্রয় করে নিয়ে যান। আমাদের এ বাজারে ড্রাগন চাষিদের কোনো ভোগান্তি পেতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন সুলতানা জানান, চলতি বছরে মহেশপুরে ৩১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হলে প্রায় ২শ কোটি টাকার ড্রাগন ফল এবার বিক্রি করবে ড্রাগন চাষিরা। বেলেমাঠ বাজারে ড্রাগন ফলের বাজার বসেছে। ড্রাগন চাষিরা সহজেই তাদের মাঠে উৎপাদিত ড্রাগন ফল বেলে মাঠের বাজারে নিয়ে আসতে পারবে। শুনেছি বেলেমাঠ বাজারে ড্রাগনের দামও ভালো পাচ্ছেন ড্রাগন চাষিরা।
মন্তব্য করুন