রাজবাড়ীতে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নানা সমস্যায় বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ী সুইমিংপুল। ফলে সাঁতার শেখা থেকে বঞ্চিত জেলার কিশোর, কিশোরী, শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রজন্ম। অথচ এক সময় এ জেলার অনেক সাঁতারু জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণ জয় করেছেন।
বর্তমানে পানির পাম্প ও নিষ্কাশন, বিদ্যুৎ বিল বাকিসহ নানা সমস্যায় বন্ধ রয়েছে সুইমিংপুলটির সব ধরনের কার্যক্রম। পুলের চৌবাচ্চায় পানি না থাকায় নষ্ট হচ্ছে টাইলস। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ, অর্থের অভাব ও অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা সুইমিংপুলে ময়লা পানি জমেছে।
দীর্ঘ বছর পরও সুইমিংপুলটি চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের পরিদর্শন এবং প্রতিশ্রুতির পরও চালু হয়নি সুইমিংপুলটি।
জানা গেছে, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ভবানীপুরে ২০০৩ সালে ৩ একর জমির উপর ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় আন্তর্জাতিক মানের সুইমিংপুল। উদ্বোধনের পর থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চালু ছিল সুইমিংপুলটি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সুইমিংপুলটির মূল ফটক বন্ধ এবং সামনে মাটির স্তূপ। মূল ফটকের ভেতরে ঢুকতে চোখে পড়ে বিশাল মাঠ। মাঠে গরুর বিচরণ এবং একপাশে সুইমিং কমপ্লেক্স। ঘাসের কারণে কমপ্লেক্সে যাওয়ার ইটের রাস্তার অবস্থান বোঝার উপায় নেই। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে পানির পাম্প।
পুলে পানি না থাকায় শুকিয়ে গেছে চৌবাচ্চা। বেশকিছু জায়গা থেকে উঠে গেছে টাইলস। পুলে পানি না থাকায় নষ্ট হচ্ছে টাইলস। আয়রনে কালো ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে বাকি টাইলসগুলো। ব্যবহার না হওয়ায় কমপ্লেক্সের পাশের সিঁড়িতে জন্মেছে আগাছা, পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও মহাসড়ক উন্নয়ন কাজে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, পরবর্তীতে এখানে কোনো লোকবল পদায়ন না করা, গভীর নলকূপটি অকেজো হয়ে পড়া, পানিতে আয়রন সমস্যা, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা, পানি নিষ্কাশন না হওয়াসহ নানা কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পুলটি। এখন মাঝেমধ্যে ইঞ্জিনচালিত স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে প্রশিক্ষণ বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও তা মাত্র কয়েক দিনের জন্য।
ঈশিতা কর্মকার নামে এক শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, আমাদের রাজবাড়ীতে সুইমিংপুল থাকা সত্ত্বেও সাঁতার শেখা থেকে আমরা বঞ্চিত। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আমরা অনুশীলন করতে পারি না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি দ্রুতই বন্ধ এ পুলটি যেন চালু করে দেয়।
শাকিল মোল্লা নামে এক ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে সুইমিংপুলটি ভুতুড়ে হয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লতাপাতা ও জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি রাখি দ্রুতই বিষয়টি দেখার জন্য।
আরেক যুবক সিয়াম ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন সুইমিংপুল বন্ধ আছে। এখানে রক্ষণাবেক্ষণের কেউ নেই। এ বিষয়টি যেন কারো নজরে পড়ছে না। বিশেষ করে কর্তৃপক্ষের যেন চোখেই পড়ছে না। পুলটি বন্ধ থাকায় এখানে মাদকসেবীরা মাদক সেবন করেন এবং বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকেন। তবে দুঃখজনক ব্যাপার এগুলো দেখার কেউ নেই।
আক্ষেপ প্রকাশ করে রাজবাড়ী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সফি কালবেলাকে বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় পুলটি চালুর জন্য কিন্তু তারা করে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে সুইমিংপুলে কোনো বরাদ্দ হয় না।
তিনি বলেন, পানির পাম্প নষ্ট, আয়রনের কারণে এখন পুলটির টাইলস নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পুলের সংস্কার প্রয়োজন। ফিল্টার আয়রন মেশিনের ব্যবস্থা হলে পুলের কার্যক্রম রক্ষণাবেক্ষণ করা যেত। বর্তমান পুলটিতে সাঁতার শেখার কোনো অবস্থা নেই। যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টিম এসে সংস্কারের আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান।
উল্লেখ্য, সাঁতারে রাজবাড়ী জেলার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছেন রাজবাড়ীর ডলি আক্তার, লায়লা নুর, মিতা নুর, পুতুল ঘোষ, নিবেদিতা দাস, রূপালী আক্তার, সোনালী আক্তারসহ অনেকেই। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনটি বিশ্ব অলিম্পিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডলি আক্তার।
মন্তব্য করুন