আকাশ উদ্দিন। এবারের এইচএসসির পরীক্ষার্থী। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে যাবেন তিনি। কিন্তু গত ৩০ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুযোর্গ বন্যার কারণে অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। ফলে মঙ্গলবার শুধু সিলেট বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে চলছে।
কথা হলে আকাশ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, সারা বছর পড়াশোনা করে এইচএসসি পরীক্ষার সময় বৃষ্টিপাত ও বন্যায় সব কিছু তলিয়ে গেছে। তাই অনেক দিন ধরে টেবিলেও বসতে পারিনি। অন্যদিকে ধার্য করা দিনে পরীক্ষা দিতে হবে। নয় তো একটা বছর নষ্ট হবে। আগামীকাল নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা দিয়ে আসতে পারব কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। শুধু এই পরীক্ষার্থী কথা নয়, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে রেজিস্ট্রেশনকৃত পরীক্ষার্থীদের একই দশা।
জানা গেছে, সিলেটের আবহাওয়া এখনো অনুকূলে আসেনি। রাত-দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ভারি তো কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত। তার মধ্যে দেখা দিয়েছে উজানের ঢলের পানি। সুরমা নদী-কুশিয়ারা নদীর পানি বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে ব্যাপক আকারে ধারণ করায় রাস্তা, বাসা-বাড়ি- দোকানপাট-নদী-নালা তলিয়ে যাওয়ায় আতঙ্কে আছে মানুষ। এমনকি অনেক পরীক্ষার্থীর বইপত্র বানের পানিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসির পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরুর খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহলের শিক্ষাবিদরা।
তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে আরও কয়েক দিন পরে পরীক্ষা শুরু হলে পরীক্ষার্থীদের জন্য ভালো হতো। এতে ফলাফল বিপর্যয় কিংবা শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ার শঙ্কা থাকত না। বোর্ডের উচিত ছিল বন্যা পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পরীক্ষা শুরু করা।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল কালবেলাকে বলেন, এখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রের আশপাশে পানি থাকলেও কেন্দ্রের মধ্যে কোনো পানি নেই। এ কারণে ৯ তারিখে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত। আমার জানা মতো ৩টা পরীক্ষা কেন্দ্রে পানি রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না।
এখনো অনেক শিক্ষার্থীদের বাড়ি ও তার যাতায়াতের সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। এতে তাদের পরীক্ষায় আসা ব্যাঘাত ঘটবে কি না বা অনেকের বই-খাতাও পানিতে ভেসে গেছে। এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমি স্থানীয় অনেক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিবেশ আছে। তাই আমরা পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। আগে থেকেই তো পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ছিলই। তাই এতে সমস্যা হবে না।
সিলেট নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর লিয়াকত শাহ ফরিদি কালবেলাকে বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। তারপরেও সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মঙ্গলবার সারা দেশের রুটিন অনুযায়ী সিলেটের শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষায় অংশ নিতে ভোগান্তিতে পড়বে। এতে ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। যদি বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন বন্যা উন্নতি শেষে পরীক্ষা নিতেন। তাহলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফলে বয়ে নিয়ে আসতে পারত।
শিক্ষাবিদ আবুল ফতেহ্ ফাত্তাহ্ কালবেলাকে বলেন, বন্যার এমন খারাপ পরিস্থিতিতে শিক্ষা বোর্ড আরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। অসংখ্য পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পানিবন্দি আছেন। বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত পরীক্ষার্থীদের পরবর্তী শিক্ষা জীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। যেহেতু পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে তাই এখন চেষ্টা করা পরীক্ষার্থীরা কষ্ট হলেও অংশ নেওয়া। সিলেটে এত বিপর্যয়ের মধ্যে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কেন এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বোর্ডের?
সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রমা বিজয় সরকার কালবেলাকে বলেন, যেসব পরীক্ষা কেন্দ্র বন্যা আক্রান্ত ছিল তা ঠিক করা হয়েছে। আশা করি সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চার জেলার ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৮২ হাজার ৭৯৫ জন শিক্ষার্থী এবার এইচএসসিকে অংশ নিচ্ছে। আর সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে পরীক্ষা কেন্দ্র ৮৭টি।
মন্তব্য করুন