চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ১০ দিনব্যাপী ৩৯তম আন্তর্জাতিক শাহাদতে কারবালা মাহফিল শুরু হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) থেকে হাজারো দ্বীনদার আহলে বায়তপ্রেমী মানুষের উচ্ছ্বাসমুখর পরিবেশে মাহফিলে আংশগ্রহণ করেন।
জমিয়তুল ফালাহ শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে মাহফিলের উদ্বোধনী দিনে দেশি-বিদেশি ইসলামী স্কলার ও আলোচকরা বলেছেন, সত্য-মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চিরন্তন। প্রতিটি যুগে হক-বাতিলের উপস্থিতি ছিল ও থাকবে। কিন্তু ৬১ হিজরিতে ঐতিহাসিক কারবালা ময়দানে হক-বাতিলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে নবী দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) নেতৃত্বে হক ও সত্যের চূড়ান্তভাবে বিজয় ঘটেছে।
সত্যানুসন্ধিৎসু হকপন্থি মানুষের ইমানি চেতনা ও প্রেরণাই হচ্ছেন আহলে বায়তে রাসুল (সা.) ও হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। তাঁদের আঁকড়ে ধরে থাকলে কখনো ইমানচ্যুতি ঘটবে না। মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, মহররম মাসে সংঘটিত কারবালার ঘটনা আমাদের শোকাতুর ও বেদনার্ত করে তোলে। আহলে বায়তে রাসুল (সা.) তথা নবী পরিবারের ওপর নরাধম ইয়াজিদি বর্বরতার কথা জেনে আমরা শোকে বেদনায় কাতর হয়ে পড়ি। কারবালা তাই আমাদের চেতনা, প্রেরণা ও ইমানি উজ্জীবনের স্মারক। জমিয়তুল ফালাহর দেখাদেখি দশদিনের শাহাদাতে কারবালা শাহফিল দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাহফিলে বিদেশি আলোচক ছিলেন ভারতের কাসওয়াসা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশীন তাজুল উলামা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ নুরানি আশরাফ আশরাফি আস-সিমনানী। তিনি বলেন, কারবালা হচ্ছে মুসলিম মিল্লাতের জন্য ইমানি চেতনা ও জজবার প্রতীক। যার অন্তরে বিন্দুমাত্র ইমান আছে কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনা স্মরণে এলে তার মাঝে হাহাকার ও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটবেই। ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়তে রাসূলের (সা.) প্রতি শর্তহীন ভালোবাসা, অকুণ্ঠ আনুগত্য, শ্রদ্ধা-ভক্তিই ইমানের অনিবার্য দাবি।
উদ্বোধক ছিলেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালিব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, হক-বাতিলের মধ্যে বিস্তর মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। আমরা সর্বাবস্থায় হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকব। আর মিথ্যা ও বাতিলকে ঘৃণা করব এটাই হোক আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়। তিনি জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের সূচনাকারী খতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দীন আলকাদেরীন (র.) অবদানের কথা স্বীকার করেন।
আলোচক ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা কাযী মুহাম্মদ মুঈনুদ্দিন আশরাফী। তিনি বলেন, কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রাসুলিল্লাহ (সা.), আহলে বায়তে রাসুল (সা.) ও আসহাবে রাসূলিল্লাহ এই ৪টিই ইসলামের স্তম্ভ। এগুলোকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলেই নাজাত মিলবে। আজ ইয়াজিদ নেই। কিন্তু আজ ইয়াজিদয়ত আছে। ইসলামের স্বচ্ছ বাগানে কিছু প্যাঁচা শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করেছে। এরা খারেজি ও শিয়া। এদের ব্যাপারে সচেতন হয়ে আমাদের ইমান আকিদা বাঁচাতে হবে।
মাহফিলে আলোচক ছিলেন খ্যাতিমান সুন্নি বক্তা আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী। অতিথি ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ মুহাম্মদ মহসিন চৌধুরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক আবু হাসান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লি. ডিরেক্টর অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ মুহাম্মদ কাশেম, হাটহাজারী দরবার শরীফের সাজ্জাদনশীন শাহ্জাদা সৈয়দ আমিনুল হক আলকাদেরী, ফরহাদাবাদ দরবার শরীফের সৈয়দ মুজাম্মেল হক ফরহাদাবাদী। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারি শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।
সঞ্চালনায় ছিলেন ড. আল্লামা জাফর উল্লাহ। মাহফিলে বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যরাসহ বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদনশীনরা উপস্থিত ছিলেন। সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়। মাহফিলের ৬ষ্ঠ দিন থেকে পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যাবস্থা থাকবে।
চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে ৩৯তম শাহাদাতে কারাবালা মাহফিলের প্রথম দিনে মাহফিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পিএইচপি পরিবারের চেয়ারম্যান আলহাজ সূফি মুহম্মদ মিজানুর রহমান ও বিদেশ থেকে আগত বিদেশি ইসলামী চিন্তবিদরা।
মন্তব্য করুন