খুলনায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ জুলাই। ওই দিন খুলনা জেলা শাখা, খুলনা মেডিকেল কলেজ শাখা, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলা শাখার সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে। তবে ভেন্যু নির্ধারণ নিয়ে খুলনায় আওয়ামী পন্থি চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের গ্রুপিং আবারও প্রকাশ্যে এলো। তোপের মুখে সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির সভা মুলতবি করে সভা শেষ করতে হয়েছে বর্তমান নেতৃত্বকে।
এদিকে এবারের সম্মেলনে নতুন চমক খুলনা মেডিকেল কলেজ কমিটি। দেশের বড় শহরগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবারও কেন্দ্র থেকে মেডিকেল কলেজ শাখা কমিটি করা হবে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। তবে সম্মেলনের সময় যত এগিয়ে আসছে খুলনায় চিকিৎসকদের মধ্যে বিদ্যমান গ্রুপিং আরও মাথাচাড়া দিচ্ছে।
রোববার (৭ জুলাই) রাতে খুলনা স্বাচিপের নির্বাহী কমিটির সভায় সম্মেলনের ভেন্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে আসে।
মিটিংয়ে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক কাওসার আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়- আগামী ১৪ জুলাই খুলনা স্বাচিপের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবং খুলনার বেসরকারি টাইগার গার্ডেন হোটেলের কমিউনিটি সেন্টারকে সম্মেলনের ভেন্যু হিসেবে বলা হয়েছে। এ চিঠি পাওয়ার পর খুলনা জেলা স্বাচিপের নির্বাহী কমিটির সভা আহ্বান করে কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মেহেদী নেওয়াজ। এতে সভাপতিত্ব করেন ডা. সামসুল আহসান মাসুম।
তবে তাদের অজ্ঞাত রেখে কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের ভেন্যু নির্ধারণ করে দেওয়ায় বিরোধ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে প্রথমবারের মতো নির্বাহী কমিটিতে সভায় যোগ দেওয়া ডা. গাজী মিজানের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য।
সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক সদস্যের ভাষ্যমতে ডা. গাজী মিজান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হলেও খুলনা বিএমএ নির্বাচনে পরাজয়ের পর খুলনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রিক স্বাচিপের রাজনীতি নিয়ন্ত্রক গ্রুপটিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি নিজের মতো ভেন্যু নির্ধারণ করেছেন। এতে ডা. গাজী মিজানের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ওই সভায় উপস্থিত অনেক নেতা। তবে তার পক্ষেও বেশ কয়েকজন যুক্তি দেখিয়েছেন হোটেল টাইগার গার্টেনে সম্মেলন করার ব্যাপারে।
খুলনা বিএমএ ও স্বাচিপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, যেহেতু কেন্দ্র ইতোমধ্যে একটি চিটি দিয়েছে। আমাদের এ ব্যাপারে কোনো কথা নেই। কিন্তু সারা দেশের ন্যায় মেডিকেল কলেজের সুবিশাল অডিটোরিয়ামে সম্মেলন করা হলে স্বাচিপ আর্থিকভাবে লাভবান এবং রাজনৈতিক সৌন্দর্য ঠিক থাকতো। তারপরও আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
খুলনার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের বর্তমান পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর। ওই দিন খুলনার তৎকালীন সভাপতি ডা. বাহার ও তাদের অনুসারীদের বাদ রেখেই সম্মেলন করে ডা. সামসুল আহসান মাসুম ও ডা. মেহেদী নেওয়াজ কমিটি। কমিটি থেকে বাদ পড়ে ডা. বাহারুল আলম ও তার অনুসারী হিসেবে বিবেচিত ডা. গাজী মিজানুর রহমান ডা. বঙ্গকমোল বসুসহ তাদের অনুসারীরা প্রথমে একটি কমিটি করে। পরবর্তীতে ওই কমিটি টিকে না থাকলে মামলা দিয়ে বর্তমান পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ করতে চায়। পরবর্তীতে আদালতে মামলা খারিজ হলে বহাল থাকে বর্তমান কমিটি।
দুই বছর মেয়াদী কমিটি থাকলেও ৭ বছরের বেশি সময় ধরে চলমান বর্তমান কমিটি মূলত তাদের কার্যকারিতা হারায় ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ওই দিন অনুষ্ঠিত খুলনা বিএমএ নির্বাচনে স্বাচিপের বর্তমান পরিষদের নেতারা দুভাবে ভাগ হয়ে নির্বাচন করার পর খুলনায় স্বাচিপ পরবর্তীতে শুধু ফুল দেওয়া সংগঠনে পরিণত হয়। গেল বছরের ২৫ নভেম্বর স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসলে গুঞ্জন শুরু হয় খুলনা স্বাচিপের সম্মেলনের।
খুলনার চারটি পদে আসতে পারে নতুন মুখ খুলনা জেলা স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি ডা. সামসুল আহসান মাসুম তার কর্মকালের পুরো সময় ছিলেন নিষ্প্রভ। মূলত কোনো অনুসারী না থাকায় এবারের নেতৃত্বের আলোচনায় তাকে দেখা যাচ্ছে না।
তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মেহেদী নেওয়াজ। তবে বিএমএ খুলনার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ এবং বিএমএ সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. বঙ্গকমোল বসুকেও দেখা যেতে পারে সভাপতি হিসেবে।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খুলনা জেলা স্বাচিপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএমএ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সুমন রায়, জেলা স্বাচিপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএমএ যুগ্ম সম্পাদক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী, স্বাচিপের প্রচার সম্পাদক ডা. জিল্লুর রহমান তরুণের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে এবারই প্রথম খুলনা মেডিকেল কলেজ স্বাচিপের কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে। এই কমিটিতেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন। জেলা স্বাচিপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএমএ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সুমন রায়, জেলা স্বাচিপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএমএ যুগ্ম সম্পাদক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী, স্বাচিপের প্রচার সম্পাদক ডা. জিল্লুর রহমান তরুণ এবং ডা. এসএম তুষার আলম।
খুলনা জেলা স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ কালবেলাকে বলেন, খুলনায় জেলা ও মেডিকেল কলেজ এ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কমিটি গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সম্মেলনের মাধ্যমে এ কমিটি ঘোষণা করবেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও খুলনার চিকিৎসকরা যদি চায় তাহলে আমাকে আবারও দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে সম্মেলন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি কমিটি যাই হোক সম্মেলন সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হবে। একটি উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে।
উল্লেখ্য আগামী ১৪ জুলাই খুলনা নগরীর হোটেল টাইগার গার্টেন এর কমিউনিটি সেন্টারে খুলনা বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল জেলা স্বাচিপের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এ ছাড়া স্বাচিপ সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন