গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সদর মেট্রো থানার জোড়পুকুরপাড় এলাকায় একটি জমির মাটির নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় কলসির ভেতর ১৬টি তাজা শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও ঢাকায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রেনেডগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানার ওসি সৈয়দ রাফিউল করিম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম চার বছর আগে জোড় পুকুর সংলগ্ন দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনে বাউন্ডারি দিয়ে ফেলে রাখেন। সম্প্রতি তিনি ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সোমবার সকালে সেখানে স্থানীয় লোকজন কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টার দিকে মাটি খনন করার পর গর্তের মধ্যে একটি মাটির কলসের ভেতর গ্রেনেড সদৃশ কয়েকটি বস্তু দেখা যায়।
বিষয়টি জমির মালিক ৯৯৯ ফোন করে পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এক পর্যায়ে পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করে, কলসিতে রাখা বস্তু পরিত্যক্ত গ্রেনেড। এ অবস্থায় নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সীমানা ঘেরা জমির গেটে তালাবদ্ধ করে রাখে পুলিশ। পরে ঢাকায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এএসপি মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তারা দুটি রোবটসহ ঘটনাস্থলে বোম্ব শনাক্তকরণের যন্ত্রপাতি দিয়ে গ্রেনেডগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পরে ইউনিটের কয়েকজন সদস্য গিয়ে ১৬টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করেন। বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত এসব গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
এ সময় বিস্ফোরণের শব্দে আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। গ্রেনেড উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। এ সময় আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ঘটনাস্থলের কাছে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটও প্রস্তুত রাখা হয়।
বাড়ির মালিক আবুল কাশেম ও স্থানীয়রা জানান, শ্রমিকরা সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি জানায়। পরে প্রথমেই ৯৯৯ ফোন দেওয়া হয়। পরে গাজীপুর সদর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এক পর্যায়ে বোমা নিষ্ক্রিয় দল আসেন। তারা উদ্ধারকৃত গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান।
এ বিষয়ে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর রোবটের সাহায্যে মটকার ভেতরে পলিথিন মোড়ানো গ্রেনেডগুলোর পিন পরীক্ষা করা হয়। পরে দুজন সদস্য নেমে ১৬টি গ্রেনেড উদ্ধার করেন। উদ্ধারের এক পর্যায়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলো অনেক আগের, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। একটির সঙ্গে অপরটি লেগে থাকায় এগুলো আলাদা করতেও সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেনেডগুলো কত আগের বা কোন দেশের তৈরি তা জানা যায়নি । এগুলো জানতে গ্রেনেডগুলোর নমুনা ফরেনসিক ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। বিষয়টি গাজীপুর মহানগর পুলিশসহ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করছে।
মন্তব্য করুন