চার তলা বাড়ি নির্মাণে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা ছাত্রলীগের আরেক নেতা। তার সঙ্গে এ কাজে যোগ দিয়েছে থানা সেচ্ছাসেবক লীগের আরও কিছু নেতা। বর্তমানে আহত ওই ছাত্রলীগ নেতার অবস্থা সংকটাপন্ন।
বুধবার (৩ জুলাই) এ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের বড়মিয়া মসজিদ পুকুর পাড় এলাকায়।
জানা যায়, প্রথমে তার ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর পিস্তল দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় তার মাথা। ফাটিয়ে দেওয়া হয় মুখমণ্ডল। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে বাকলিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে পৃথক কয়েকটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী।
আহত ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. ওমর ফরহাদ (৩০)। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক। তার বাবা মো. ফরিদ আহম্মদ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের আগ্রবাদ হেড অফিসের সাবেক কর্মকর্তা। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের সদরে হলেও, পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারে বড় মিয়া মসজিদের রসুল আবাসিক এলাকার সি-ব্লকে।
যাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ, তারা হলেন- নগরের বাকলিয়া থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুর রহমান আজিজ, সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা নয়ন ভট্টচার্য, চান্দগাঁও থানা সেচ্ছাসেবক লীগের গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, চন্দগাঁও থানা সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সাইফুল ইসলাম, শাওন, কাজী রাসেল, মোহাম্মদ শাহীন (প্রকাশ ব্লেড শাহীন)।
এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থাকায় চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধারায় রয়েছে ৫-৭টি করে মামলা। এর মধ্যে কয়েকজন জেলও খেটেছেন বহুবার।
হামলার শিকার ওমর ফরহাদ কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় আমাদের চারতলা বেল্ডিংয়ের কাজ চলছে। বর্তমানে তিন তলা পর্যন্ত ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দু’মাস আগে বাড়ি নির্মাণের জন্য আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আজিজ, নয়নসহ ১০-১৫ জন। আমরা তাতে রাজি হইনি। যে কারণে গত দুই মাস আগে আমার বড় ভাইকে নগরের কালামিয়া বাজারের ফুলকলি রেস্তোরাঁর সামনে মারধর করে। এ ঘটনায় তিনি বাকলিয়া থানায় জিডি করেন এবং সিআর মামলা করেন চট্টগ্রাম আদালতে। আজীজকে প্রধান করে সেসময় অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজিজ দীর্ঘদিন ধরে মামলার সাক্ষীকে ধমকাচ্ছিল মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, থানায় গিয়ে এক সপ্তাহ আগে আমাদের মামলার সাক্ষীকে ধমকানোর বিষয়টি জানাই। এতে আজিজরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। সেদিন বড় মিয়া মসজিদ রোডের বাকলিয়া হাই স্কুল রোডে আমার সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। ওই দিন রাতেই তারা আমার বাড়িতে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে। ভাইয়ের রুম থেকে সাড়ে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ সাড়ে ৩ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। সেগুলো সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড রয়েছে। বিষয়টি থানায় জানালে বাকলিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালান।
তিনি আরও বলেন, পরে বিভিন্ন বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযান চালালে তারা বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর আমি এশার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় আমাকে পিস্তল ঠেকিয়ে একটি গলিতে নিয়ে যায় তারা। ৩০-৩৫ জন আমাকে মারধর করে। আঘাত করে আমার নাকের হাড় ভেঙে ফেলে। আমার মুখমণ্ডলে চরম আঘাত করে। নয়ন ভট্টচার্য পিস্তলের পেছনের অংশ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। যে কারণে আমার মাথা থেতলে যায়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমাকে মৃত ভেবে তারা চলে যায়। সেখান থেকে বাকলিয়া থানা পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। আমার ওপর তারা নাকি আবার হামলা করবে, এমনটা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় আমি আবার মামলা করব।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন বাকলিয়া থানার মুন্সী হাসান চৌধুরী। কালবেলাকে তিনি বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ তৎপর রয়েছে।
মন্তব্য করুন