সৌদি আরবে সোফা কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে গত বুধবার (৩ জুলাই) নিহত রাজশাহীর বাগমারার সাইদুর রহমান সরদারের (৫২) মরদেহ দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন নিহতের পরিবার। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনিসহ চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
রোববার (৭ জুলাই) সকালে তার নিজ বাড়ি উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামে গেলে তার পরিবার অশ্রু সজল নয়নে এই দাবি জানান।
নিহত সাইদুর উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বারুইহাটি রসুলপুর গ্রামের মেহের সরদারের ছেলে। নিহতের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে থামছে না নিহতের পরিবারের আহাজারি। তবে নিহতের পরিবার জানে না কীভাবে মরদেহ দেশে আনতে হবে। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
পরিবারের লোকজন জানান, অভাবের তাড়নায় ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দুই বছর আগে সাইদুর রহমান সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে কাজে যান। সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরি কারখানায় কাজ করতেন।
তার সঙ্গে পাশের নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আরও কয়েকজন শ্রমিক একই সঙ্গে কারখানাতে কাজ করতেন। নিহত সাইদুর রহমানের ছেলে আবু বাক্কার জানান, গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) সাইদুরসহ ১৬ জন শ্রমিক ওই কারখানায় কাজ করছিলেন। এ সময় আকস্মিক আগুন ধরে যায় কারখানাটিতে। কর্মরত ১১ জন শ্রমিক রক্ষা পেলেও সাইদুরসহ চারজন শ্রমিক বের হতে পারেননি। তারা আগুনে পুড়ে মারা যান। বুধবার ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আত্রাইয়ের শ্রমিক বাবুল হোসেন মোবাইল ফোনে বিষয়টি সাইদুর রহমানের পরিবারকে জানান।
ওই ঘটনায় তিনিও সামান্য দগ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গের চারজন আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান। পিতার মৃত্যুর সংবাদে ছেলে আবু বক্কর (১৫) বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। একইভাবে বৃদ্ধ পিতা মেহের আলী সরদার ছেলেকে হারিয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন।
দুই বছর আগে মা মারা যাওয়ার পর বাবাকে ভরসা হিসেবে পেয়েছিল ছেলে আবু বক্কর। সেটাও তিনি হারিয়ে ফেলল। তাকে ঘিরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশীরা। সে আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে।
আহাজারিতে সকলের কাছে বাবার মরদেহ দেশে এনে দাফন করতে সহযোগিতা চাইছে। বৃদ্ধ বাবাও হতবাক। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর অস্বাভাবিক আচরণ করছেন তিনি।
এ বিষয়ে যোগিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন। মরদেহ দেশে ফেরত আনতে সার্বিকভাবে চেষ্টা করবেন তিনি।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, নিহতের মরদেহ দেশে ফেরত এবং সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন