রংপুরের কাউনিয়ায় উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার শাখা নদীসহ মানস নদীর পানিও বাড়ছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চল গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার। অনেকেই তাদের শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশু উঁচু স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। ক্লাসে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চরাঞ্চলের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বেলা ১২টায় থেকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
অন্যদিকে ডালিয়া ব্যারাজের পয়েন্টে সোমবার সকাল ৯টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
পাউবো এ কর্মকর্তা বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজানে ঢলের কারণে ডালিয়া ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা হয়েছে। উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে ভাটির অঞ্চল কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিকেলের দিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্প মেয়াদি বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এরই মধ্যে নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন চরগুলো তলিয়ে গেছে। পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে তিস্তার শাখা মানাস নদীতে বাঁশের সাঁকো।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শায়লা জেসমিন সাঈদ জানান, চরঢুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উঠান প্লাবিত হওয়ায় ক্লাসে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি ২০১২ সালে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর স্থানীয় এক বাড়িতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চর ঢুষমারা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উঠানে পানি উঠেছে। শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদান বন্ধ করে চলে এসেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান হাবিব সরকার জানান- উপজেলার শহীদবাগ, টেপামধুপুর, বালাপাড় ও হারাগাছ ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এবং চরাঞ্চল গ্রাম এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, তিস্তা নদীর বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে এবং নদীর তীরবর্তী পানি বন্দিদের তালিকা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন