মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ওসি শ.ম কামাল হোসেইনের বিরুদ্ধে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে কাটতে হয়। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান হলে টেন্ডার আহ্বান করে গাছ বিক্রয় করতে হয়। কিন্তু ওসি কামাল হোসেইন এবং এসআই কামাল হোসেন এসবের কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে প্রায় লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে গোপনে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১ জুলাই সকাল ৯টায় রেলওয়ে থানার ভেতরে থাকা বড় এবং মাঝারি সাইজের বেশ কিছু গাছ রেলওয়ে থানার ভেতর থেকে সাইজ অনুযায়ী টুকরো করে শহরের সোনার বাংলা রোড দিয়ে ট্রাক যোগে নিয়ে যেতে দেখেছেন স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শী এবং আশপাশের দোকানে লাগানো ভিডিও ফুটেজ থেকে এসব তথ্য মেলে। এ ছাড়া থানার ভেতরে গিয়েও দেখা যায় গাছ কাটার চিত্র। গাছগুলো কেটে ফেলা হলেও বন বিভাগ বলছে, তারা কিছুই জানে না।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কাটা গাছগুলো সোনার বাংলা রোড থেকে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পুলিশের ভয়ে এসব বিষয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। নাম না বলার স্বার্থে শহরের একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলেন, যেদিন গাছ কাটা হয়েছে সেদিন শ্রীমঙ্গলে ঝড় হয়নি। এ ছাড়া ঝড়ে গাছ উপড়েও পড়েনি, কয়েকটি ডালপালা ভেঙ্গেছে। কিন্তু ট্রাকবোঝাই এসব গাছ থানার ভেতর থেকে এনে ট্রাকে তুলতে দেখেছেন তারা।
মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ওসি শ.ম কামাল হোসেইন জানান, কোথায় গাছ কাটা হলো? বিক্রি করা হয়নি। এগুলো সব মিথ্যা এবং বানোয়াট। গাছ কাটলেই তো অনুমতি নেওয়া হবে। গাছ ট্রাকে করে নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ এবং থানার ভেতরেও গাছ কাটার চিত্র পাওয়া গেছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানুষের জানমালের রক্ষায় ঝড়বৃষ্টিতে পড়ে যাওয়া গাছ কাটা হয়েছে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের বিপরীতে পালটা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, তখন আপনি কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন যখন ঝড়ে গাছ পড়েছিল? আপনি কী উদ্দেশ্য নিয়ে থানায় এসেছেন বলেন? এখন আমি বাইরে আছি, বেশি কিছু জানতে চাইলে আপনি ভিডিও ফুটেজ নিয়ে সন্ধ্যায় আবার থানায় আসবেন বলে ওসি ফোন কেটে দেন।
শ্রীমঙ্গল বনবিভাগ রেঞ্জের সহকারী কর্মকর্তা মো. আলী তাহের বলেন, সরকারি বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান হোক গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। গাছ কাটতে হলে প্রথমে ইউএনও বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে গাছ কাটার কমিটি গঠিত হবে, এরপর গাছ কাটার বিষয়ে চিঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে আমাদের অফিসে আসবে। রেলওয়ে থানার ভেতর থেকে গাছ কাটা বা বিক্রির বিষয়ে আমরা অবগত নই। বন বিভাগের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিডব্লিউআই (চডও) এর কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, শুনেছি গাছকাটা হয়েছে। গাছগুলো থানার ভেতরেই থাকার কথা। আমরা কোনো অনুমতে দেইনি গাছ কাটার। কাটা গাছগুলো কবে কীভাবে ট্রাকযোগে কোথায় নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এখন খোঁজখবর নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন