উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুর ২টা পর্যন্ত এ উপজেলার প্রায় ৭/৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এ ছাড়া চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রোববার বিকাল ৩টায় শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বস্তি গোরকমন্ডল, চর-গোরকমন্ডল, যতিন্দ্রনারায়ণ, চর-যতিন্দ্রনারায়ন, সোনাইকাজী, পশ্চিম ও পূর্ব ধনিরাম, দক্ষিণ বড়ভিটা, চর-বড়লই, চর মেকলি, হাজির বাজার, বাংলা বাজার, খোঁচাবাড়ী ও রাঙ্গামাটি এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানির স্রোতে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল বাঁধ থেকে আনন্দ বাজার যাওয়ার একমাত্র রাস্তার উপর নির্মিত সেতু দেবে গেছে। ফলে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, বন্যায় আমার ইউনিয়নের শত শত পরিবার গবাদি পশুর সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিছু লোক উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে কিন্তু এখনও অনেক পরিবার চরাঞ্চলে পানিবন্দি অবস্থায় আছে। সাধ্যমত চেষ্টা করছি তাদের পাশে থাকার। ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কান্তি সাহা বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার জন্য ৭টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। ৬ হাজার পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও ১ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, চলমান বন্যায় ২৬০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পাট, আমন বীজতলা, আউশ ধান, শাকসবজি, তিল, তিসি, চিনা, কাউন ফসল তলিয়ে গেছে। আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখছি। তবে কিছুদিন এভাবে পানি জমে থাকলে বীজতলাসহ ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন থেকে ২১ টন চাল ও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম কালবেলাকে বলেন, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছি। নিজেরাও ঘুরে ঘুরে দেখছি।
তিনি বলেন, বন্যাকবলিত সকল পরিবারকে আমরা খাদ্য সহায়তা প্রদান করছি। যতদিন বন্যা থাকবে ততদিন বরাদ্দ সাপেক্ষে সহায়তা অব্যাহত রাখব।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল বলেন, শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পয়েন্টে (তালুক শিমুলবাড়ি) ধরলার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন