এক সময়ের পরিত্যক্ত ইটভাটা এখন সবুজের সমারোহ। পরিত্যক্ত সেই ইটভাটায় কেমিক্যাল ও বিষমুক্ত বিভিন্ন ফল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চাঁদপুরের উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন।
চাঁদপুর সদরের শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহতলী গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে দেখা মিলে হেলাল উদ্দিনের ‘ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রো’। পরিত্যক্ত ইটভাটা বালু ভরাট করে তিনি গড়ে তোলেন তার এই স্বপ্নের রাজ্য। যেখানে আছে, বিদেশি নানা জাতের আম, মালটা, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ নানা প্রজাতির ফল। নদী তীরঘেষা এই সবুজের সমারোহে একই সঙ্গে তিনি গড়ে তুলেছেন রিভার ভিউ ক্যাফে নামে রেস্টুরেন্টও। যেখানে বিশ্বসেরা এসব ফল চিনতে ও দেখতে ছুটে আসেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রোর কর্মচারী বাপ্পী সরকার বলেন, যখন এখানে প্রথম কাজ শুরু করি তখন বুঝতেই পারিনি এটা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। এখানে কাজের সুবাধে আমি এখন বিশ্বসেরা আম চিনতে পারছি এবং এগুলোর পরিচর্যা করতে পারছি। আমার মতো প্রায় ৩০ জন কর্মচারী এখানে কাজ করছেন। সবচেয়ে ভালো লাগে যখন মানুষ আমার কাছে এখানকার আম ও অন্যান্য ফল সম্পর্কে জানতে চায়।
এখানে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মিশ্র ফলের এই বাগানের নাম ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো। যেখানে বিশ্বসেরা ৪৮ প্রজাতির আমসহ মোট ৩৭ প্রজাতির নানা জাতের ফলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ হচ্ছে। বালি দিয়ে ভরাট করা এই স্থানটিতে সারাবছর ফল পাওয়া যায় বলে এটি চাঁদপুরের আলোচিত স্থান। এখানে ক্যান্সার প্রতিরোধক গাছের জাতেরও চাষাবাদ হচ্ছে। এ ছাড়াও ৯ প্রজাতির এবাকাডো, ১১ প্রজাতির লংগন, ১৯ প্রজাতির কমলা, মাল্টা ও বিচিবিহীন ফলের চাষ হওয়ায় এটি সবার কাছে শিক্ষণীয়।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাছান বলেন, উচ্চমূল্যের কিং অব চাকাপাত, অস্টিন, অস্টিন গোল্ড, মায়া, কেরাবো, হেডেন, মিয়াজাকি, ব্লেক স্টোন, থ্রি টেস্টের মতো বিশ্বসেরা আমের জাত চিনতে শিক্ষার্থীদের এখানে আসা উচিত। তা ছাড়া আমাদের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঠপর্যায়ে এ সংক্রান্ত অনেক কিছু হাতে-কলমে জানার জন্য এখানে আসা প্রয়োজন। কেননা তাদের এ সংক্রান্ত দুটি বিষয়ও রয়েছে।
এ বিষয়ে ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, শখের বসে গড়ে তোলা এই ফলের বাগানের কোনো কোনো আমের দামের কেজি ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এ ছাড়াও এসব গাছের চাড়ার মূল্যও ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা। যা অত্যন্ত লাভজনক বলেই মনে করছি। আর এখানে যারা এগুলো দেখতে আসেন তারাই এগুলোর ক্রেতা। তাই আমি নতুন উদ্যোক্তা যারা হতে চায় তাদের বলব, আপনারা কমদামি জাতের ফলচাষে না ঝুঁকে উচ্চমূল্যের বিশ্বমানের ফলের চাষাবাদে আগ্রহী হন। এতে করে দেশে ফলের চাহিদা পূরণ হয়ে অর্থনীতিতেও এ দেশের ফল ভালো অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন রায় বলেন, বালির ওপর মাটি ফেলে গড়ে তোলা পরীক্ষামূলক এই ফলের বাগান গড়ার কারিগর হচ্ছেন উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন সাহেব। তার পাশে সবসময় পরামর্শ সহযোগিতা নিয়ে পাশে আছে কৃষি বিভাগ। আমরা চাই তার এমন অনুকরণীয় ফলের বাগান দেখে বেকাররাও এমন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হয়ে উঠুক।
মন্তব্য করুন