বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমলেও বাড়ছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৮২টি গ্রামের ১১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬৮ হাজার ৪০০ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। উপজেলার ১ হাজার ২৪ হেক্টর জমির ফসল পানিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৮ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলার ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও মুজিব কিল্লাসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারিয়াকান্দির ইছামারা, হাটশেরপুর, কর্ণিবাড়ি, সোনাতলার সুজাইতপুর এবং ধুনটের শহড়াবাড়ি বাঁধের ১০০০ মিটার ভাঙন ঝুঁকি রয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাসেল বলেন, তার ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের অনেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বানভাসি মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরবর্তী মানুষের পুনর্বাসন করতে যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে সোনাতলায় ৯ হাজার পরিবারের ৩১ হাজার ৫৩২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। এ ছাড়াও উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ২০ হাজার গরু-ছাগল ও ৬৫ হাজার হাঁস-মুরগি বন্যার কবলে আছে বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুসরাত জাহান লাকি।
তেকানি চুকাইনগর ইউনিয়নের ভিকুনেরপাড়া গ্রামের মোজাম সরকার, সাকা সরকার ও তোতা সরকার বলেন, ‘এ এলাকায় এখনও কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌছায়নি। আমাদের খাবার পানি ও গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ঘরের মধ্যে হাটু পর্যন্ত পানির মধ্যই অসহায়ভাবেই আমাদের দিনকাল যাচ্ছে’।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘সোনাতলায় ৩হাজার ৮৯৩ কৃষক পরিবার বন্যাক্রান্ত। এ ছাড়াও ৬৫৫ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলে গেছে। এরমধ্য ৪৭০ হেক্টর পাট, ১৭৫ হেক্টর আউস ধান, ২হেক্টর আমন বীজতলা ও শাকসবজি ৮ হেক্টর। বিশেষ করে পাট বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিত সার্বক্ষণিক জানার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় কখন কি প্রয়োজন তা আমরা এ সেলের মাধ্যমে জানছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়াও তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। ৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তাও আমরা মজুত রেখেছি।’
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, শুধু সারিয়াকান্দিতে ১ হাজার ০৮৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ভ‚ট্টা, পাট ও সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে। যতদিন বন্যা আছে ততদিন ত্রাণ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।
বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করেছি। এরইমধ্যেই সোনাতলায় প্রায় ৪০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়ত করা হয়েছে। আরও ৪০ টন জিআর চাল মজুত রয়েছে ,যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন