ঝালকাঠি রাজাপুর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থী। রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর পূর্ব সাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহতরা হলো- ফয়সাল আজমের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জুনায়েদ আজম, আবু বকর খানের ছেলে লিটন খান, হেলালের ছেলে রনি হাওলাদার, মানিক আকনের ছেলে আব্দুল্লাহ ও আলমগীর হোসেনের ছেলে তামিম। স্থানীয়ভাবে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর ওই স্কুলের প্রায় ১৪৩ জন শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়। আতংকিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরেনি। ঘটনার পর থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান।
কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস চলছিল। এমন সময় ছাদ ধসে পড়ে বিকট শব্দ হয়। বালু-সুরকি মাথায় ও চোখে পড়ে পঞ্চম শ্রেণির জুনায়েদ ও তামিমসহ অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে তারা প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে ক্লাসের শিশু শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে পড়েছে।
প্রধান শিক্ষক আক্ষেপ করে আরও বলেন, ২০০৪ সালে অফিস রুমসহ দুই কক্ষের এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। একটিতে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস এবং আরেকটিতে বিদ্যালয়ের অফিস রুমের কাজ চালিয়ে আসছি। অন্য একটি টিনসেড রুমে চলে অন্যান্য ক্লাস। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকির মধ্যে এ ভবনটি আমাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে। ছাদের ফাটলসহ চরম ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে এক বছর আগেই আমি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ একবার পরিদর্শনও করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হানিফ, কবির ও সুলতান বলেন- অনেকদিন ধরেই পলেস্তারা খসে পড়তো। কিন্তু কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। এভাবে হঠাৎ বিম ভেঙে পড়ায় ওই স্কুলে আর কোনো পড়াশোনার পরিবেশ নেই। আল্লাহ কোমলমতি শিশুদের বড় রকমের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আজকে বড় রকমের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারতো। নতুন করে স্কুলের ভবন নির্মাণ না করা পর্যন্ত স্কুলে আর বাচ্চাদের পাঠাব না।
আহত শিক্ষার্থী জুনায়েদ, তারিম ও লিটন জানায়- আগ থেকেই কমবেশি পলেস্তারা ভেঙে পড়ত। রোববার ক্লাস চলাকালে হঠাৎ বিমসহ অনেক স্থানের পলেস্তারা ধসে পড়ে বিকট শব্দ হয়। এতে ৫ শিক্ষার্থী মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়।
এতে শিক্ষার্থীরা ভয়ে আতংকিত হয়ে ছুটাছুটি শুরু করে। নতুন ভবন নির্মাণ না করা পর্যন্ত আর ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করবে না বলেও জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে ঘটনার পর স্কুলটি পরিদর্শন করেন রাজাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তার হোসেন। পরে তিনি বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীও এর আগে স্কুলটি ভিজিট করে গেছেন। কিন্তু ভবনটি এত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায়নি। আমি ভবনটির দুটি কক্ষই তালা মেরে সব ধরনের ক্লাস ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে প্রধান শিক্ষককে লিখিত আবেদন করার জন্য বলেছি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক কুমার সমদ্দারের দাবি করেন বলেন, স্কুলটির এমন জরাজীর্ণ অবস্থা সম্পর্কে এর আগে তাকে কেউ জানায়নি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে স্কুলটির জন্য জরুরি বরাদ্দ চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন