বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় যমুনা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৮১ মিটার। শনিবার বিকেল ৩টায় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৮৩ মিটার। এই উপজেলায় পানির বিপৎসীমা ১৬ দশমিক ২৫ মিটার।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সারিয়াকান্দি উপজেলার ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের টেংরাকুড়া চরের একটি রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাস্তাটির ২০ ফুট অংশের মাটি ধসে গিয়ে এ গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমির ফসল প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া রাস্তাটির আরও একটি অংশ ধসে গিয়ে সেখানে বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেখানেও ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত উপজেলার ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে প্লাবিত হয়েছে এবং ৮ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মাত্র পাটগাছ আক্রান্ত হয়েছে ৪৩০ হেক্টর জমির। পানিবন্দি হয়েছে ৩২ হাজার ছাগল এবং ৪৩ হাজার গরুসহ বেশকিছু গৃহপালিত পশু। এ ছাড়াও ৫৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৯০টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৫০টি কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এক হাজার ৫০টি নলকূপ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
পানিবন্দি হওয়ায় বন্যা কবলিত মানুষরা তাদের বসতভিটার উঁচু জায়গার মাচা পেতে বসবাস করছেন, কেউবা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন। এছাড়াও উপজেলার বন্যাক্রান্ত এলাকাবাসী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা রান্না করতে না পারায় খাবার কষ্টে রয়েছেন এবং তাদের বসতভিটা ডুবে যাওয়ার কারণে তারা পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যায় ভুগছেন।
কাজলা টেংরাকুড়া চরের আজাহার আলী বলেন, টেংরাকুড়া গ্রামের রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো ইউনিয়নের এলাকাবাসীর সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষজন পানিবন্দি হয়েছে। রাস্তাটির অপর পাশের ধসে যাওয়া অংশ ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।
সারিয়াকান্দি ইউএনও তৌহিদুর রহমান বলেন, বন্যার জন্য এ উপজেলার মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। উপজেলার একটি মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে তার জন্য সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ইতোমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে, বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে এবং ৬টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, যেহেতু পানি বৃদ্ধির হার কমে গেছে। তাই দু একদিনের মধ্যেই পানি স্থিতিশীল হয়ে কমতে শুরু করবে। কাজলার টেংরাকুড়া চরের ভেঙে যাওয়া রাস্তাটি পরিদর্শনের জন্য ইতোমধ্যেই লোক পাঠানো হয়েছে। পরিদর্শন শেষে চরাঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শুক্রবার বিকেলে সোনাতলা ও সারিয়াকান্দির বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সোনাতলায় ৫০ টন এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় ১০০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেছেন, যতদিন বন্যা থাকবে ততদিন ত্রাণ দেয়া হবে। প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করে বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন