রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৮ পিএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

বন্যার কারণে একই ঘরে মানুষের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে গরু। ছবি : কালবেলা
বন্যার কারণে একই ঘরে মানুষের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে গরু। ছবি : কালবেলা

সিলেটে তৃতীয় দফার বন্যায় ভালো নেই বিভিন্ন উপজেলার মানুষ। বন্যার কারণে দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না বানবাসীদের। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবং পাহাড়ি ঢল না থাকায় কিছুটা কমছে সিলেটের নদ-নদীর পানি। ফলে নদী ও হাওরাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

তবে এখনো চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত মানুষ। কুশিয়ারা নদীর ৩টি পয়েন্ট ও সুরমা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। বন্যার কারণে সড়ক, কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামোসহ নানা খাতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের উত্তর-পূর্বের এ জেলা।

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৯৮টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৩৯টি গ্রামের ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৮৭ মানুষ বন্যাকবলিত রয়েছেন। জেলার ৬৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৩১ মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।

১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করে বন্যার্ত অসুস্থ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কন্ট্রোল স্থাপন করে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ সিলেট এলাকার বেশির ভাগ জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সিলেটের কুশিয়ারা নদীর ৩টি পয়েন্ট ও সুরমা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টের পানি।

শনিবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ, পয়েন্টে যথাক্রমে ১০৯, ২৯, ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে গোয়াইনঘাটে দেখা গেছে, বন্যার পানিতে গোয়াইনঘাট-সালুটিকর প্লাবিত সড়কের পানি কিছুটা নামলেও বন্যায় সড়কে বড় গর্ত তৈরি হওয়ার কারণে যান চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে পানি নেমে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট টু রাধানগর জাফলং সড়ক দিয়ে যান চলা স্বাভাবিক হয়েছে।

তবে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১১৯টি গ্রাম প্লাবিত এবং ১২ হাজার ৪০০ পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে। ১৫০০ হেক্টর কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত আছে। এসব এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি আছে। মানুষজন নৌকা দিয়ে চলাফেরা করছেন।

উপজেলার বিছনাকান্দি ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের শফিক মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি নামলে ও রাস্তাঘাট থেকে এখনো পানি আছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত থাকায় মানুষ ভোগান্তিতে আছে।

একই গ্রামের লিল মিয়া বলেন, দফায় দফায় এ রকম বন্যা আমার জীবনেও দেখিনি। পানির ঢেউয়ে ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। খাওয়ার কোনো উপায় নাই। গত তিন দিন ধরে বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি অনেকটা কমছে। কাল রাতে বৃষ্টি হওয়ায় আর পানি কমেনি সমান রয়েছে।

বিছনাকান্দি ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, উজান ও হাওরের পানি নামছে ধীরে ধীরে। মনে হয় আটকে আছে। পানি বেশি দিন থাকায় বেশি ভোগান্তি। দফায় দফায় বন্যা মানুষ আর কত সহ্য করবে। ঈদের দিনে মানুষের ঘরে পানি উঠেছে। ঈদও মানুষও করতে পারেনি। পরে পানি কমলেও আবারও বন্যা হয়ে যায়। এ পর্যন্ত তিন বারের বন্যায় মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও বন্যা আছে।

১ নম্বর রুস্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন শিহাব বলেন, বার বার বন্যায় মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এবার বন্যার পানি নামার গতি কম, আগে বন্যা আসলে পানি কম সময়ে নেমে যেত এখন সেটা হয় না।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। নৌকা না থাকায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বিড়ম্বনায় পড়ে। পানিতে ডুবেছে ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।

উপজেলার ৪টি এলাকা দিয়ে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে বানের পানি লোকালয়ে ঢুকে ভেসে গেছে বিপুলসংখ্যক পুকুর ও ফিশারির মাছ। সেই সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জকিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, জকিগঞ্জ-সিলেট ও শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কের একটি অংশ তলিয়ে গেছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম কালবেলাকে বলেন, পানি কিছুটা কমায় জকিগঞ্জে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। লোকালয় থেকে পানি নামছে। তবে এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। এরমধ্যে ৮টিতে মানুষ আছেন। শুকনো খাবারের পাশাপাশি পানিবন্দিদের রান্না করা খাবারও বিতরণ করা হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খুবিতে তৃতীয় নৈয়ায়িক ন্যাশনাল্সে চ্যাম্পিয়ন চবি

গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি সমমনা জোটের

সিলেট কারাগারেই চিকিৎসা চলছে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের

৬ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ : মাহফুজ

রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি

‘সাংবাদিকরা সমাজে মেডিয়েটরের ভূমিকা পালন করে থাকেন’

দুর্গাপূজায় সনাতনীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি : মাহবুবের শামীম

নাসা স্পেস অ্যাপস প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন জবি

ষড়যন্ত্র বানচালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : প্রিন্স

কার হাতে কত সোনার মজুত?

১০

পিএসসির চাকরির পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়ক সারজিসের স্ট্যাটাস

১১

যে কোনো সময় ইরানে হামলা চালাবে ইসরায়েল

১২

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৩

লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন টুকু

১৪

কলেজ অধ্যক্ষকে বাঁচাতে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

১৫

প্রতিটি শহীদ পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া উচিত : মেজর হাফিজ

১৬

সংসদের মেয়াদ ৪ বছর চায় গণঅধিকার পরিষদ

১৭

আন্দোলনে হামলাকারী হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য মনিরুল গ্রেপ্তার

১৮

বিএনপি সম্প্রীতির রাজনীতি করে : আমিনুল হক

১৯

আ.লীগ শাসনামলেই হিন্দু সম্প্রদায় বেশি অত্যাচারিত হয়েছে : অ্যাডভোকেট সালাম

২০
X