ঝিনাইদহের সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যসহ দোকান বরাদ্দের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আগের সভাপতি এ বিষয়ে বলতে পারবে, আমি কিছু জানি না। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া আইন মেনেই হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে নিয়োগ পাওয়ার পরও এক শিক্ষিকা ৮ বছরে এখনও বেতন পাননি। যার কারণে বিনা বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন তিনি।
তবে এলাকাতে সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাজার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন ১৪ বছর আগে স্কুলে যোগদান করে বিভিন্নভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগে অনিয়ম করে আসছেন। সরকার ২০১৫ সালে কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করলে তিনি পূর্ববর্তী তারিখ দেখিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শাখায় দুটি শ্রেণি শাখার অনুমোদন আছে, অথচ প্রতারণা করে অতিরিক্ত শাখা দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ করে ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ওই পাঁচ শিক্ষক সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এমনকি নিয়োগের পূর্বে কোনো জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেনি। ডিজির প্রতিনিধিসহ যেসব সদস্য নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থাকা আবশ্যক সেসব ব্যক্তিবর্গের উপস্থিত না রেখে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিয়োগ সম্পন্ন করেন। সংশ্লিষ্ট শাখা না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণা করে অষ্টম শ্রেণির খ শাখায় তিনজন নিয়োগ দিয়েছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও কৃষি বিষয় পাঠদানের অনুমোদিত শিক্ষক নিয়োগ ছিল কিন্তু যখন বিজ্ঞান ও কৃষি বিষয়ের শিক্ষক অবসরে যান তখন অবৈধভাবে ‘বিজ্ঞান ও কৃষি’ বিষয় বিলুপ্ত করে শাখা শিক্ষকের বেতন এমপিওভুক্ত করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের মার্কেটের ২৪টি দোকান দুই লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিলেও দোকানগুলো থেকে প্রাপ্ত ৪৮ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের হিসেবে দেখাননি। এ ছাড়া আরও ১৭টি ঘর খালি জায়গা বাবদ ১৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত ২০২০ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের খাতা সম্পূর্ণ খালি রেখে হিসাবনিকাশ করেছেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের থেকে আদায়কৃত অর্থ এবং স্কুল ও কলেজের দোকান ভাড়া আদায় রশিদেও নানা অনিয়ম দেখা যায়।
বিনাবেতনে চাকরি করছেন লিপিকা খাতুন ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার লিপিকা খাতুন। তিনি সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৮ম শ্রেণির খ শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। পরে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ লাভ করেন। ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির খ শাখায় সৃষ্ট শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত তিনি প্রধান শিক্ষক মঈন উদ্দিনকে বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক লোন এবং জমি বিক্রয় করে ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
লিখিত অভিযোগে সহকারী শিক্ষক লিপিকা খাতুন বলেন, দীর্ঘ আট বছর নয় মাস বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে পাঠ দান করি। কিন্তু কথা ছিল একদিনও বিনা বেতনে কাজ করা লাগবে না। দীর্ঘসময় বিনা বেতনে পরিশ্রম করার পরে এমপিওভুক্ত হয়নি। সবার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও আমার নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েও টালবাহানা করছে। এখনও নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি আমার। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক রাকিবুল ও মাসুম হোসেন জানান, আমরা সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান অধ্যক্ষ মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আব্দুল মতিন সাহেবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। তিনি এ অভিযোগ পেয়ে পরবর্তীতে কী করেছেন তা আর আমাদের জানায়নি।
এ বিষয়ে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি আব্দুল মতিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনি এ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচজন শিক্ষকের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। যেহেতু অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ সে কারণে তদন্তের জন্য আমি জেলা প্রশাসকসহ বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে জড়িত থাকলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
মন্তব্য করুন