ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা কারাগারটি অযত্ন অবহেলায় ৩৪ বছর ধরে পড়ে আছে। কারাগারটি এখন যেন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ভবনটি নষ্ট হতে বসেছে ও প্রতিদিনই সন্ধ্যার পরে চলে বখাটে নেশাখোর ছেলেদের আড্ডা। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে অনেকেই এখন জেলখানাটি ভূতের বাড়ি নামেই চেনে।
জানা যায়, ১৯৯১ সালে সরকার উপজেলা আদালতগুলোকে জেলা শহরে স্থানান্তর করে। সারা বাংলাদেশে ২৫টি উপকারাগার ছিল। উপকারাগারগুলোকে প্রত্যাহার করলে, এটি গত ৩৪ বছর ধরে পরিত্যক্ত। উপকারাগারের বর্তমান অবস্থা, অযত্ন, অবহেলা আর তদারকির অভাবে কারাগারটির দরজা-জানালা ভেঙে ভুতুড়ে ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭-৮৮ সালে উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এক একর ১৫ শতাংশ জমির ওপর কারাগারটি নির্মাণ করা হয়। এতে মূল কারাগার একটি, মহিলা কারাগার একটি, স্টাফ কোয়ার্টার একটি ও একটি ব্যারাক হাউস রয়েছে। ১৯৯০ সালের ১৬ আগস্ট সাবেক পাটমন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম কারাগারটি উদ্বোধন করেন। উপজেলার হাজতি ও দাগি আসামিদের ঠাঁই হতো ওই কারাগারে। আসামি নিয়ে জেলা কারাগার বা দেশের বিভিন্ন কারাগারে ছুটাছুটি করতে হয়নি সেসময়। কিন্তু উদ্বোধনের মাত্র এক বছরের মাথায় সরকারের পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় কারাগারটি। সেই থেকে ব্যবহার না করা এবং অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে কারা ভবনটি। তাতে বাসা বেঁধেছে সাপ-বিচ্ছু।
গত কয়েক বছর আগে পরিত্যক্ত কারাগারটি স্থানে উপজেলা ফায়ার স্টেশন নির্মাণের দাবি করেছিলেন চরভদ্রাসনবাসী। কিন্ত তাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। ফায়ার স্টেশনটি অন্য জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে কারাগারটি এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস মোল্লা বলেন, আমার জন্মের পর থেকে দেখছি কারাগারটি এভাবে পড়ে রয়েছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে এর ক্ষয়ক্ষতি আরও হতে পারে। তা ছাড়া এত বড় স্থাপনাসহ জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় রাতে এখানে খারাপ লোকজনের উপস্থিতিতে সরব থাকে। জেলখানাটি সংস্কার না করা হলে চরভদ্রাসনবাসীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।
উপকারাগারটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা চরভদ্রাসন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জাহিদ তালুকদার বলেন, এ উপকারাগারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে এখানে ফায়ার সার্ভিস হওয়ার কথা থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের অফিসটি উপজেলার অন্য জায়গায় হয়েছে। এ রকম সারা দেশে মোট ২৫টি উপ-কারাগার রয়েছে। তার মধ্যে ২১টিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দুটি মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ পরিত্যক্ত উপকারাগারটিতে জুয়া খেলা ও মাদকসেবন যেন না করা হয় এই বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন