তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

লাম্পি স্কিনে এক মাসে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু

লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত মৃত গরুকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা
লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত মৃত গরুকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছড়িয়ে পড়া লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়ে এক মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু মারা গেছে। গরু বাঁচাতে না পারায় চরম দুঃশ্চিন্তায় খামারিরা।

খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত চর্ম রোগটি গ্রীষ্মের শেষ ও বর্ষার শুরুর দিকে বছরে দুবার ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত মশা, মাছি ও বিশেষ পোকার মাধ্যমে গরুর দেহে ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া সংক্রমিত গরুর সঙ্গে খাবার গ্রহণ করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার তালম পদ্ম পাড়ায় করিম সুপারের ১টি, তালম গ্রামের সোরহাব হোসেনের ২টি, বকুলের ১টি, হাবিব মাস্টারের ১টি, রবিউল করিমের ১টি, আলামিনের ১টি, মোতালেবর ১টি, সেলিম সরকারের ১টি, কালামের ১টি, নামা সিলেট গ্রামের তাহের উদ্দিনের ১টি, দিঘি গ্রামের জহুরুল ইসলামের ২টি, সগুনা গ্রামের মাহবুর হোসেনর ১টি, চরকুশাবাড়ি গ্রামের লিটন আহমদের ১টি, ভাটার পাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ১টি, রহমত আলীর ১টি, খালকুলা গ্রামের সবের আলীর ১টি, তাড়াশ পৌর এলাকার কৃষক ইউনুস আলীর ১টি, সানোয়ার হোসেনের ১টি, দিঘুরিয়া গ্রামের আউয়াল হোসেনর ১টি, শিবপুর গ্রামের মহন আলীর ১টিসহ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে কৃষক ও খামারিদের কমপক্ষে ৫০টি গবাদি পশু গরু মারা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে উপজেলার তালম ইউনিয়নের তালম পদ্ম পাড়া গ্রামের মাদ্রাসার সুপার মো. করিম হোসেনের বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখা যায়, গোয়াল ঘর থেকে বাড়ির চারদিকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। যেন সেখানে থাকায় দায়। বাড়ির অনেকে নাকে কাপড় দিয়ে সরে যাচ্ছেন দূরে। এরইমধ্যে গামছায় মুখ বেধে গোয়ালে ঢুকলেন দুজন কৃষক। তারপর একটি মরা গরুর চার পা রশিতে বাঁধা হলো। এরপর রশিতে বাঁধা গরুর পায়ের ভেতর দিয়ে লম্বা কাঠ দিয়ে ওই দুজন কৃষক কাঁধে নিয়ে রওনা হলেন। মূলত লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া গরু মাটিতে পুঁতে রাখার জন্য কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাড়ি থেকে দূরে ফাঁকা স্থানে।

স্থানীয়রা জানান, গত মাস খানেক ধরে প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক ও খামারিদের গরুর লাম্পি স্কিনে আক্রান্তের হার বেড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা জুড়ে। আর গত এক মাসে এ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে কৃষক ও খামারিদের কমপক্ষে ৫০টি গরু মারা গেছে। সেই সঙ্গে আক্রান্ত আরও অনেক গরুর চিকিৎসা চলছে। সে চিকিৎসাও ব্যয় বহুল এবং মারা যাওয়া গরুর বেশিরভাগই বাছুর।

তালম গ্রামের কৃষক সোরহাব আলী জানান, প্রথমে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত তার গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। খাবারের রুচি কমে আসে। এক সময় আক্রান্ত গরুর জ্বর বেশি হয়ে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে। এরপর গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত দেখা দেয়। সে ক্ষত কয়েক দিনে পঁচে গিয়ে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পাশাপাশি গরুর দুই পায়ের মাঝে বুকের নিচে পানি জমে ঝুলে পড়ে। আর এভাবে আমার দুটি গরু লাম্পি স্কিন আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর আমি ওই দুই গরুর চিকিৎসা করাতে দুই সপ্তাহে পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের ভিজিট ও দামি দামি ওষুধ কিনতে প্রায় ১২ হাজার টাকা ব্যয় করি। তারপরও আমার গরু দুটি বাঁচাতে পারিনি।

দিঘি গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, ষাঁড় ও বাছুরসহ ছয়টি গরু আছে। এরমধ্যে দুটি গরু এলএসডি রোগে সংক্রমিত হয়েছে। মশা ও মাছি থেকে বাঁচতে ২৪ ঘণ্টা মশারি টানিয়ে রাখতে হচ্ছে। এখন মোটামুটি সুস্থ হলেও গরুর চামড়ার ওপর গভীর ক্ষত হয়ে আছে।

এদিকে তাড়াশ পৌর এলাকার কৃষক হাসান আলী, আব্দুল মাকেল, রেজাউল করিমসহ অনেকের অভিযোগ, তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদাসীনতা ও গরু ছাগলসহ গবাদি পশুর অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে উপজেলা এলাকায় পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের দৌরাত্ম যারপরনাই বেড়ে গেছে। তারা এখন লাম্পি স্কিনসহ গবাদি পশুর নানা রোগের চিকিৎসায় এন্টিবায়েটিক এবং রেজিস্ট্রার চিকিৎসক ছাড়া লেখা যায় না এমন ওষুধ লিখে মোটা দাগে খরচ নিয়েও আক্রান্ত গরু তেমন বাঁচাতে পারছেন না। আর এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বেশিরভাগ কৃষক ও খামারি।

অপরদিকে বেশির ভাগ লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গবাদি পশুর ভুক্তভোগী মালিক কৃষক এবং খামারিদের ভাষ্য, উপজেলা প্রাণিসম্পদ ভেটেরিনারি হাসপাতালে গেলে গরুসহ অনান্য গবাদি পশুর তেমন চিকিৎসা পাই না। আবার পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের কাছে গেলে তারাও দু একটি ইনজেকশন আর এন্টিবায়েটিক ঔষধ দিয়ে প্রথমে হাজার বারোশ টাকা বিল করেন। আর বলেন, চিকিৎসা করেন দেখা যাক কী হয়।

চৌড়া গ্রামের পল্লী প্রাণি চিকিৎসক মো. তাইজুল ইসলাম বলেন, লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত তালম গ্রামের নজরুল ইসলাম, কুসুম্বী গ্রামের কুশকার সরকার নামা সিলট গ্রামের রাজুর, বিনোদপুর গ্রামের রব্বানীরসহ আরো অনেক গ্রামের কৃষক ও খামারির লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চলছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডা. অলিউল ইসলাম কয়েকটি গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ ভেটেরিনারি হাসপাতালে থেকে লাম্পি স্কিনসহ নানা রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর চিকিৎসায় আমরা আন্তরিক। এ ছাড়া এরই মধ্যে শত শত গরুকে লাম্পি স্কিনের প্রতিষেধক টিকাও দেওয়া হয়েছে। আর লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গবাদি পশু গরুর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রতিষেধক টিকা কাজ করলেও ২০/২৫ ভাগ কাজ করবে না। পাশাপাশি পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার এখতিয়ার নাই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হঠাৎ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ওবায়দুল কাদের

সিএসআরএমে জব সার্কুলার, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

জাপান বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু : রেলমন্ত্রী 

ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অপসারণ করল মন্ত্রণালয়

জয়ার বারান্দায় মিষ্টি আলুর চাষ 

সেমির আগে মার্তিনেজের আবেগঘন বার্তা

ছাত্রলীগ সেক্রেটারির বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৮

ব্রাজিল ফুটবলের লজ্জার রাতের এক দশক আজ

ট্রেনের আসন সংখ্যা কমানোর প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন

সৈয়দপুর রেলস্টেশন / দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি লুপ লাইনের কাজ

১০

কোটা আন্দোলন / ট্রেন আটকে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’

১১

ইরানের ভবিষ্যৎ ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে!

১২

মাটির নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় গ্রেনেডের সন্ধান

১৩

বৈশাখীতে ‘শিকারি’

১৪

পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধে ধস, আতংকে এলাকাবাসী

১৫

গণহত্যা জাদুঘরকে সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দিলেন গণপূর্তমন্ত্রী 

১৬

আকর্ষণীয় বেতনে নিয়োগ দেবে ওয়ার্ল্ড ভিশন

১৭

বাসচাপায় কলেজছাত্র নিহত, গাড়িতে আগুন

১৮

যমুনায় ধীরগতিতে কমছে পানি, দুর্ভোগে ৯০ হাজার মানুষ

১৯

সহপাঠীকে হত্যার পর রক্তমাখা শরীরে লাশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজিন

২০
X