জামালপুরের বকশীগঞ্জে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দুই কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার বাট্টাজোড় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বকশীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জয় প্রকাশ নন্দী দুই কর্মচারীকে মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাট্টাজোড় ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জুয়েল তালুকদার।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে অভিযোগে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোড় ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ১৪ মাসের। গত বছরের ৫ মে থেকে চলতি বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত পরিষদের বকেয়া বিল ২১ হাজার ৮১১ টাকা। এবং বাট্টাজোড় ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমানের পানাতিয়াপাড়া নিজ বাড়ির বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রয়েছে ১৩ মাসের। গত বছরের ২৩ জুন থেকে চলতি বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত বকেয়া বিল ২৪ হাজার ৫২৫ টাকা। পল্লীবিদ্যুৎ অফিস থেকে একাধিকবার তাকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের তাগাদা দেওয়া হলেও তিনি বিল পরিশোধ করেননি। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তার পরিষদে এবং বাড়িতে বকেয়া বিল আদায়ের জন্য গেলে তিনি সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তার আচরণে অফিসের কোনো লোকজন তার কাছে যেতে সাহস পান না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাইন ম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও লাইন ক্রু-১ ইলিয়াস আহমেদ ইউনিয়ন পরিষদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরিষদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর খবর পেয়ে চেয়ারম্যান পরিষদে আসেন। চেয়ারম্যান পরিষদে এসে বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ করা হবে জানিয়ে ডিজিএমকে বিচ্ছিন্ন সংযোগটি পুনরায় লাগিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যানের কথায় সংযোগটি পুনরায় লাগিয়েও দেওয়া হয়। সংযোগ দিয়ে চলে আসার সময় লাইন ম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও লাইন ক্রু ইলিয়াস আহমেদকে মারধর করেন চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জুয়েল তালুকদার।
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন ডিজিএম জয় প্রকাশ নন্দী। পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এ ব্যাপারে লাইন ম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযানে গিয়ে পরিষদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর চেয়ারম্যান পরিষদে আসেন। ডিজিএম স্যারের সঙ্গে কথা বলার পর আমরা তাৎক্ষণিক আবার লাইন লাগিয়েও দেই। চলে আসার সময় চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও মারধর করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন বাসায় আছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জুয়েল তালুকদার বলেন, বরাদ্দ না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়নি এবং সময়ের অভাবে বাড়ির বকেয়া বিল যথাসময়ে দেওয়ার সুযোগ হয়নি। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় শ্রমিকদের মারধরের বিষয়টি সঠিক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করা হবে।
বকশীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম জয় প্রকাশ নন্দী বলেন, বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা তাদের নিয়মিত অভিযান। ইউপি চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন সময়ে বকেয়া বিল পরিশোধের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। উল্টো বিদ্যুৎ অফিসের কোনো লোকজন বকেয়া আদায়ের জন্য গেলে তিনি তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় দুই শ্রমিককে মারধর করেছেন তিনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বকশীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খাঁন জানান, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের পর তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন