জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছেন এক গৃহবধূ। বুধবার (৩ জুলাই) বিকেল থেকে ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনো এলাকার মৃত রোকনুজ্জামান খোকার ছেলে মহসীনের বাড়িতে ওই গৃহবধূ এ অনশন শুরু করে।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেন ওয়ার্ডের মেম্বার ফরহাদ হোসেন শিমুল।
পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ মহসীনের ঘরের দরজায় বিয়ের দাবিতে অনশন করছেন। কিন্তু প্রেমিক মহসিনসহ পরিবারের লোকজন সবাই ঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়েছে বলে জানান ওই গৃহবধূ।
অনশনরত গৃহবধূর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহসিনের সঙ্গে আমার এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক। যখন আমার বিয়ে হয়, তখন আমি মহসিনকে সে বিয়ের কথা বলেছিলাম। কিন্তু মহসিন আমাকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়। তাই আমি পরিবারের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করি।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মহসীন প্রতিনিয়ত আমাকে ফোন দিয়ে বলতে থাকে ভালো লাগছে না। আমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। সে আমাকে বিয়ে করবে। তার এসব মিথ্যে প্রলোভনে আমি বিয়ের ১৭ দিন পর শ্বশুরবাড়ি থেকে মহসিনের সঙ্গে পালিয়ে যাই।
গৃহবধূ বলেন, পরে সে আমাকে উপজেলার ফয়েজের মোড় এলাকায় তার বন্ধু রবিনের মাধ্যমে জাহানারা বেগম নামে এক মহিলার বাসায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে ঘর ভাড়া করে রাখে। সেখানে সে দীর্ঘ দুই মাস আমার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো মেলামেশা করে। কিন্তু সে বিয়ে করে না। বিয়ের কথা বললে সে বিভিন্ন টালবাহানা করে পাশ কাটিয়ে যায়।
গৃহবধূ আরও জানান, আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসার পর আমার বাবা থানায় একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে মহসিন আমাকে বলে, আমি যেন বাবার কথা না শুনি। যদি শুনি, তাহলে সে তাকে বিয়ে করবে না। তাই আমি নিরুপায় হয়ে বাবার কথা না শুনে, বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে মহসিন এর হাত ধরে চলে যাই।
গৃহবধূর বলেন, নারী লোভী মহসিন তার প্রয়োজন মিটিয়ে আজ আমাকে একা ফেলে পালিয়েছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে মহসিনের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করছি। মহসিন আমাকে বিয়ে না করলে, এই বাড়িতেই বিয়ের দাবিতে আত্মহত্যা করব।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা জানান, মহসিন একজন নারী লোভী যুবক। সে ইতোপূর্বেও এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়েছিল। পরে সে দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে পলাতক থাকে। এরপর মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলে, সে বাড়িতে আসে। পরে তার মা তাকে বিয়ে করায়। কিন্তু মহাসিনের নৈতিক স্খলনের কারণে তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এরপর আবারও সে, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি খুবই নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক ঘটনা। এসব খারাপ প্রকৃতি মানুষকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরিষাবাড়ী থানার এসআই আব্দুল হান্নান ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু তিনি কোনো আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে চলে যান বলে জানান এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মহসীনের চাচা গাজীয়ার রহমান বিপ্লব মাস্টার জানান, তার ভাতিজা এ ব্যাপারে তাকে কিছুই বলেননি। তবে তিনি শুনেছেন বিষয়টি সাব্বির নামে এক নেতার নেতৃত্বে মীমাংসা করার চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার ওসি মুশফিকুর রহমান কালবেলাকে জানান, এ ঘটনায় থানার এসআই আব্দুল হান্নানকে পাঠানো হয়েছিল। তবে ওই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দোষীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন