শাহজাহান ইসলাম লেলিন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১১:২৮ এএম
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ভরা বর্ষায়ও বৃষ্টি নেই, আমন-পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

জমি থেকে পাট সংগ্রহ করছেন এক কৃষক। ছবি : কালবেলা
জমি থেকে পাট সংগ্রহ করছেন এক কৃষক। ছবি : কালবেলা

বাংলা দিন পঞ্জিকার হিসেবে এখন শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। এ সময় প্রকৃতিতে থাকার কথা ভরা বর্ষাকাল। কিন্তু এ মৌসুমেও মিলছে না বৃষ্টির দেখা। আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও একপশলা বৃষ্টির দেখা নেই। তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা।

আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা পাচ্ছেন না কৃষকরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় সেচযন্ত্র ব্যবহার করে আমন চারা রোপণ করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। ফলে আবাদে খরচ বৃদ্ধি ও উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা।

আরও পড়ুন : সোনালি আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত খানসামার পাট চাষিরা

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল। পানির অভাবে কৃষকরা পচাতে পারছে না পাট। জমিতে পাট কেটে ফেলে রেখেছেন। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে সেখানে পাট পচাবেন।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, চারা রোপণের এখনো সময় আছে অন্তত ১৫ দিন। এ জন্য তারা বিকল্প উপায়ে আমন চারা রোপণের পরামর্শ দিয়েছে কৃষকদের। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, আমন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। কোথাও জমি তৈরি, কোথাও সেচ দেওয়া, কোথাও চারা রোপণ আবার কোথাও বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করা হচ্ছে। বৃষ্টির আশায় না থেকে সেচযন্ত্র ব্যবহার করে আমন চাষাবাদে নেমে পড়েছেন কৃষকরা। খালে-বিলে তেমন পানি না থাকার পরও পাট কাটছেন অনেক চাষি। যেখানে সামান্য পানি পাচ্ছেন সেখানেই পচানোর জন্য মাথায় করে পাট নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে জায়গা ও পানির অভাবে রাস্তার ধারে ও জমির মাঝখানে পাট কেটে পালা করে রাখছেন।

গদা গ্রামের আলতাব উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, প্রতি বছর বৃষ্টির পানি এই সময় ধান লাগানো শেষ করি। কিন্ত গতবছর থেকে বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি দেখা পাচ্ছি না। এই সময় খাল-বিল ভরপুর থাকার কথা বৃষ্টির পানিতে। ধানের চারাও বড় হয়ে যাচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প দিয়ে জমি তৈরি করে চারা রোপণ করেছি। কিন্তু বিদ্যুতের যে লোডশেডিং এক জমিতে পানি দিতে গিয়ে ১০ বার বিদ্যুৎ যায় আসে।

কেশবা গ্রামের লতিফ বলেন, বর্ষাকালেও বৃষ্টি নেই। আর কত দিন অপেক্ষা করব। বৃষ্টির পানি নেই, আবাদ করব কেমন করে। মেশিনের পানি দিয়ে আবাদ করলে খরচ বেশি হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো গরিব মানুষ। চাষাবাদ না করলে খাব কী।

আরও পড়ুন : সমৃদ্ধ পাট খাতের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকবে -পাটমন্ত্রী

একই এলাকার মতিয়ার রহমান বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো আমনের চারা রোপণ করতে পারিনি। জমিগুলো রোদে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। শ্যালো মেশিন বা মোটর দিয়ে পানি তুলে জমি তৈরি করতে তো টাকা প্রয়োজন। টাকা-পয়সার সংকটে আছি, বৃষ্টির পানি না হলে ধান লাগানো হবে না।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চারা রোপণে ব্যাঘাত ঘটছে। মূলত আমন চারা রোপণ হয় আকাশের বৃষ্টির পানির ওপরই। এখনো সময় রয়েছে বৃষ্টি হওয়ার। তবে বিকল্প উপায়ে আমন চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের।

তিনি আরও বলেন, এখনও অনেক পাট কাটার বাকি রয়েছে। আশা করছি, এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হবে। বৃষ্টি হলে কৃষকদের সমস্যার সমাধান হবে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা ড. আবু ফজল মোল্লা বলেন, খাল-বিলে পানি না থাকায় রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন : পাটের রপ্তানি বাড়বে পাঁচগুণ

আবহাওয়া অফিস বলছে, জুলাই মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় ৩৫০-৪০০ মিলিমিটার। অথচ গত ২৩ দিনে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই সময়টাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে গেল ২০ দিনে রংপুর বিভাগে ২৬ থেকে ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

রংপুর বিভাগে ২০২০ সালে জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক শূন্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২২ সালে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার ।

চলতি মাসে ১৬৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ২০ দিন ধরে স্বাভাবিকের থেকে তাপমাত্রা বেশি ছিল ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত জুনের তুলনায় জুলাইয়ে বৃষ্টি কম হয়েছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে টানা বৃষ্টি না হলেও আগামী দুদিনে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে শিশুসহ আহত ২১

রবিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

বন্যা মোকাবিলা ও পুনর্বাসনে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের বৈঠক

খুবিতে তৃতীয় নৈয়ায়িক ন্যাশনাল্সে চ্যাম্পিয়ন চবি

গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি সমমনা জোটের

সিলেট কারাগারেই চিকিৎসা চলছে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের

৬ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ : মাহফুজ

রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি

‘সাংবাদিকরা সমাজে মেডিয়েটরের ভূমিকা পালন করে থাকেন’

১০

দুর্গাপূজায় সনাতনীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি : মাহবুবের শামীম

১১

নাসা স্পেস অ্যাপস প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন জবি

১২

ষড়যন্ত্র বানচালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : প্রিন্স

১৩

কার হাতে কত সোনার মজুত?

১৪

পিএসসির চাকরির পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়ক সারজিসের স্ট্যাটাস

১৫

যে কোনো সময় ইরানে হামলা চালাবে ইসরায়েল

১৬

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৭

লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন টুকু

১৮

কলেজ অধ্যক্ষকে বাঁচাতে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

১৯

প্রতিটি শহীদ পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া উচিত : মেজর হাফিজ

২০
X