নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সৌদিতে আগুনে নওগাঁর ৩ যুবক নিহত

বাঁ থেকে সৌদিতে আগুনে নিহত বগুড়ার এনামুল হোসেন, শুকবর রহমান ও ফারুক হোসেন। ছবি : কালবেলা
বাঁ থেকে সৌদিতে আগুনে নিহত বগুড়ার এনামুল হোসেন, শুকবর রহমান ও ফারুক হোসেন। ছবি : কালবেলা

সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রয়েছেন তিনজন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেবাইল ফোনে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস। এর আগে বুধবার (৩ জুলাই) সৌদির স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ আগুনের এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।

ইউএনও সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, সৌদি আরবে আগুনে পুরে তিনজনের নিহতের খবর পেয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দূতাবাসে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, তাদের পরিবারের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া নিহতদের মরদেহ দেশে ফেরাতে এবং সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা থাকলে সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে তাদের মৃত্যুর খবর পাবার পর থেকে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের মধ্যে নওগাঁর তিনজন হলেন আত্রাই উপজেলার তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন, শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে এনামুল হোসেন ও দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে শুকবর রহমান।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দৃপুরে তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় করে আছেন। গ্রামজুড়েই যেন কান্না রোল পরে গেছে। ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেন না। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান, চাচা গার্মেন্টে কাজ করতেন। প্রায় ৬ বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু প্রথম থেকেই নানা সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। প্রায় ৮ মাস আগে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুনে চাচা নিহত হয়েছেন।

উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, তার শ্বশুর কৃষি শ্রমিক ছিলেন। আড়াই বছর আগে নিজের একমাত্র সম্বল ১১ শতক জায়গা বিক্রি করে তার সঙ্গে ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি। ওনার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামীম হোসেন প্রতিবন্ধী। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ির তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোনো জমি নেই। কীভাবে বাকি জীবন পরিবারের লোকজন চলবেন তা নিয়ে এখন ঘোর বিপাকে পরেছেন তারা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি।

শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, এনামুল গার্মেন্ট শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ঘর বাঁধতে ঋণ করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ি নির্মাণ করছেন। বাড়ির কাজ শেষ হলে আগামী বছর দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইল না। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে নিহত হওয়ার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে পড়েছেন। কিছুতেই যেন তাদের থামানো যাচ্ছে না।

নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে ১৪ দিন পর বিকল্প পথে নৌযান চলাচল শুরু

অসুস্থ কারারক্ষীর সঙ্গে জেলারের অমানবিক আচরণ

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে এনআরবিসি ব্যাংকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

ইইউভুক্তির চেষ্টায় তুরস্ক / হাঙ্গেরি ঘিরে যে আশায় এরদোয়ান

কোটা আন্দোলন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পুলিশ না পারলেও মালিককে চিনে নিল মহিষ

কাল থেকে টিসিবির পণ্য পাবেন ফ্যামিলি কার্ডধারীরা

কোটা-পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল জামায়াত

বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল, অবরুদ্ধ রাজধানী

সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দিলেন আ.লীগ নেত্রী রানী

১০

সাপের কামড়ে শিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যু

১১

মিডিয়া কি তবে আত্মহত্যায় প্ররোচনা জোগাচ্ছে!

১২

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ভূমিকা বিশ্বে অন্যতম : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৩

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে ৫ জনের মৃত্যু

১৪

বাবার স্বাধীন করা দেশ ব্যর্থ হতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী 

১৫

এইচএসসি পরীক্ষায় দায়িত্বে অবহেলা, তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

১৬

কোচের সঙ্গে সংঘর্ষে কেইনকে নিয়ে সংশয়

১৭

দেশের ১২ জেলায় নিয়োগ দেবে ইউএস-বাংলা

১৮

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমলেও বাড়ছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ

১৯

বিশ্বসেরা গোলকিপারকে চায় না ম্যানইউ

২০
X