দরজা-জানালা বন্ধ। ভেতরে বৈঠকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বৈঠক থেকে কিছু সময় পর পর ভেসে আসছে হট্টগোলের আওয়াজ। বাইরের থাকা নেতাকর্মীরা বন্ধ জানালায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করছেন ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনার পর নগর আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সভার চিত্রটা ছিল ঠিক এমনই।
প্রায় তিন ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস বৈঠক শেষে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সঙ্গে ঘোষণা এসেছে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলন ঘিরে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। নানা ইস্যুতে সম্প্রতি নগর আওয়ামী লীগে টানাপোড়েনের জেরে আলোচনায় এসেছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের কমিটি ঘিরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবারের (৪ জুলাই) কার্যনির্বাহী সভায় বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন দুই পক্ষের নেতারা।
আলোচনা শেষে বিভিন্ন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকের আগামী ২৫ জুলাই নগরের সব কয়েকটি ইউনিটে এবং ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ার্ডে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নগরের ইউনিট ও ওয়ার্ডে যেসব কমিটি গঠন হয়নি সেগুলো নিয়েও কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারা। তাছাড়া আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
প্রায় ১৮ বছর পর আনুষ্ঠানিক সম্মেলন ঘিরে অনেকটাই উজ্জীবিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। উত্তেজনা বিরাজ করছে নগর আওয়ামী লীগে। এর আগেই গত ২০ জুন সদস্য সংগ্রহ, তৃণমূলের সম্মেলন এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলে ‘ঠাঁই না হওয়ার’ বিষয় নিয়ে বধির্ত সভায় বিতণ্ডায় জড়ান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
সম্মেলনের আগ মুহূর্তে এমন পরিস্থিতি ঘিরে এখন আলোচনায় আছেন এই নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এ দুই নেতা। দুই শীর্ষ নেতার প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বের পর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি এখন অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন এসব বাধা, বিপত্তির কথা মাথায় রেখেই সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধভাবেই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আল মাহমুদ স্বপন কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে আদর্শভিত্তিক কোন দ্বন্দ্ব নেই। যদি কোনো বিরোধ সৃষ্টি হয় সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হতে পারে। এখানে নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা থাকতে পারে বা নিজের অনুসারীদের নেতা বানানোর একটি প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। এটা একটা কাজের সিস্টেম আছে। আমরা এ কারণেই ঘন ঘন বসছি। বৃহস্পতিবারের নির্বাহী কমিটির সভায় অনেক বিষয় খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মধ্যে সবার মতামত নিয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেটুকু মতবিরোধ আসবে তা মেনে নিয়েই আমরা ভালোটা করার চেষ্টা করবো।
সম্প্রতি নাছির ও রেজাউলের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরও বৃহস্পতিবারের কার্যনির্বাহী সভায় যোগ দেননি। চসিক মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সভা চলাকালে মেয়র রেজাউল চসিকের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে নির্ভরশীল সূত্র।
সভা শেষে আ জ ম নাছির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘সভায় সব বিষয় খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিট ও ওয়ার্ডে যেসব সম্মেলন হয়নি সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে সেসব কমিটি বিলুপ্ত করা হবে।’
মন্তব্য করুন