সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিষমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকর্মী শিক্ষকের ঘুমিয়ে পড়ার ছবি তোলার ঘটনায় সুশীল কুমার মাহাতো নামে এক শিক্ষককে মারধরের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী।
তিনি জানিয়েছেন- শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলেও প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তের আলোকেই তারা নিশ্চিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত মাসের ৯ জুন স্কুল চলাকালীন ঘুমন্ত শিক্ষকের ছবি তোলায় সহকর্মীকে মারধর করেন দেবেন্দ্র কুমার মাহাতো ও বিশ্বনাথ কুমার মাহাতো। আর ওইদিনই তাড়াশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুসাব্বির হোসেন খান বিষয়টি তদন্তের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। আর এ তদন্ত কমিটির সদস্যরা ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী ও মো. মনিরুজ্জামান।
তদন্ত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে বলে স্থানীয় একাধিক অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন টাকা দিয়ে সব কিছু ম্যানেজ না হলে এর আগেও দুই ভাইয়ের বিদ্যালয়ে পাঠদান কালে ঘুমানোর সচিত্র ছবি, সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পরও তাড়াশ উপজেলা শিক্ষা অফিস কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে শিক্ষক হয়ে শিক্ষককে মারধর করার সাহস দেখিয়েছেন।
মারধরের শিকার শিক্ষক সুশীল মাহাতো বলেন অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবেন্দ্র কুমার মাহাতো ও বিশ্বনাথ কুমার মাহাতো সহোদর ভাই। তারা বিদ্যালয় চলাকালে মাসের পর মাস শ্রেণিকক্ষে, অফিস কক্ষে ও পার্শ্ববর্তী মন্দিরে গিয়ে বেঘোরে ঘুমান। যা এ এলাকার সবাই জানে। আর এর আগে এটি নিয়ে জাতীয় দৈনিক কালবেলায় ভিডিও প্রকাশ হলেও বিভাগীয় তদন্ত হয়। তারপর অদৃশ্য শক্তির কারণে তারা দুই ভাই দায় মুক্তি নিয়েছেন। এবারও তারা দায় মুক্তি নিতে এরইমধ্যে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। এমনকি তারা বলে বেড়াচ্ছে পূর্বে দুই লাখ দিয়ে ম্যানেজ করেছি। এবার না হয় চার লাখ লাগবে।
অবশ্য, অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবেন্দ্র কুমার মাহাতো ও বিশ্বনাথ কুমার মাহাতো পূর্বে দুই লাখ দিয়ে ম্যানেজ করেছি। এবার না হয় চার লাখ লাগবে এমন কথা বলেননি বলে জানান।
বিষমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নৃপেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ঘটনার সময় তিনি ক্লাস নিচ্ছিলেন। পরে অফিস কক্ষে গিয়ে দেখতে পান সুশীল কুমার মাহাতো মেঝেতে পড়ে আছেন। আর তাকে কিলঘুষি মারছেন দেবেন্দ্র কুমার মাহাতো ও তার ভাই বিশ্বনাথ কুমার মাহাতো। পরে তিনি ও সহকারী শিক্ষক প্রবীন কুমার মাহাতো দেবেন্দ্র ও বিশ্বনাথকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পরে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, শিক্ষক দেবেন্দ্র কুমার বিদ্যালয়ের পাশে খড়ের গাদার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় মোবাইল ফোনে তার ঘুমন্ত অবস্থার ছবি তোলেন অপর শিক্ষক সুশীল কুমার। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে রোববার সকালে বিদ্যালয় চলাকালে সুশীল মাহাতোকে মারধর করেন দেবেন্দ্র কুমার ও বিশ্বনাথ কুমার। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করেন।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুসাব্বির হোসেন খান বলেন, তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আর প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বেঘোরে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চাকরি করা শিক্ষক দুই ভাই অনৈতিক সুবিধা দিয়ে সংশ্লিট বিভাগ থেকে এর আগেও দায়মুক্তি নিয়েছেন এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বিষয়টি তেমন না।
মন্তব্য করুন