সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যমুনার গর্ভে বিলীন ৫ শতাধিক বাড়িঘর

সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙন। ছবি : কালবেলা
সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙন। ছবি : কালবেলা

সিরাজগঞ্জে তৃতীয় দফায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। সেই সঙ্গে জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার কাজিপুর, সদর ও শাহজাদপুর উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আর গত এক মাসে ৫ শতাধিক বসতভিটা গিলে নিয়েছে যমুনা।

বুধবার (৩ জুলাই) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। মঙ্গলবার এই পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি পায় ৩৪ সেন্টিমিটার। দুদিনে বাড়ে ৭৬ সেন্টিমিটার।

অন্যদিকে কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ মিটার। এ পয়েন্টে নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)। মঙ্গলবারও ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। দুদিনে বাড়ে ৮০ সেন্টিমিটার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ও শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর এবং কৈজুরী ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও বর্ষা মৌসুমে সেটা কোনো কাজেই আসছে না।

খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ খাসরাজবাড়ি গুচ্ছগ্রামের ৬০/৭০টি বাড়িঘর ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে চলে গেছে। গুচ্ছগ্রামের মানুষগুলো আবারও ভিটেমাটিহীন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার কাওয়কোলা ইউনিয়নে একমাসে দুইশতাধিক বাড়িঘর ও তিন হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভেবিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাটবয়ড়া, দোগাছি, বড়কয়ড়া, ছোটকয়ড়া, চন্ডাল বয়ড়া, বেড়াবাড়ি, কৈগাড়ি, দোরতা ও বর্ণি গ্রামের আরো পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, চার কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কয়েকশ একর ফসলি জমি, বন্যা ও দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র মুজিবকেল্লা, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীন ১২৬টি ব্যারাক, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ছয়টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল এবং একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন।

শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে যমুনার ডানতীরে দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙন চলছিল। গত এক মাসে এই এলাকার প্রায় পৌনে দুইশ বসতভিটা ও ৩০০ একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। যমুনার পানি বাড়ার কারণে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ভাঙন শুরু হয়েছে পার্শ্ববর্তী কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল গ্রামেও। গত তিনদিনের ব্যবধানে এ দুটি ইউনিয়নে অন্তত ৪০/৫০টি বাড়িঘর বিলীন হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলে ভাঙন চলে আসছে। মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দিলেও তিন বছরেও তা শেষ হয়নি। ফলে কিছুতেই ভাঙনমুক্ত হচ্ছে না এ অঞ্চলবাসী।

কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, কয়েকদিন ধরে হাঁট পাচিলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। কোবাদ মাস্টারের একটি দোতলা বাড়ি এবং পাশেই বিশাল গরুর খামার নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। আমাদের এলাকাবাসী কোনো ত্রাণ চায় না, এক বান্ডিল টিনও চায় না। তারা চায় দ্রুত নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে ভাঙন কমেছিল। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। দুটি এলাকায় তিনদিনে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে পাউবো সূত্র জানায়, ২০২১ সালে যমুনার ভাঙনরোধে শাহজাদপুরের এনায়েতপুর থেকে কৈজুরী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৬৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র অর্ধেক শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ জুন পর্যন্ত বাড়োনো হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙনরোধে আমরা প্রকল্পের পাশাপাশি জিওটিউব ডাম্পিং শুরু করেছি। এ ছাড়া পাউবোর ড্রেজার দিয়ে আমরা চ্যানেলটিকে প্রশস্ত করার চেষ্টা করছি। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য খনন কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নৌকাডুবে প্রাণ গেল দুই বন্ধুর

১৩০০ বছর আগের ঐতিহাসিক ‘জাদুর’ তলোয়ার উধাও!

সুপার স্পেশালাইজডের বিদ্যমান আইনে নতুন সংযোজন প্রয়োজন : বিএসএমএমইউ উপাচার্য

ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ঢাবিতে কোটা বিরোধী বিক্ষোভ শুরু

এশিয়া কাপের আম্পায়ারিং প্যানেলে জেসি

যে কারণে ইয়ামালকে পুরো ম্যাচ খেলাচ্ছে না স্পেন?

দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আরেক ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২

চমেক হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজ সেপ্টেম্বরে শুরু : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

পুলিশি বাধা দেওয়ায় সড়কেই বসে পড়ল জবি শিক্ষার্থীরা

আকর্ষণীয় বেতনে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট নেবে সিপিডি

১০

যমুনায় পানি কমায় ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন

১১

আ.লীগ সরকারের কাছে আলেম-ওলামারাও রেহাই পায়নি : টুকু

১২

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

১৩

ইউরো ২০২৪ / স্টুটগার্টে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, পিতা-পুত্রের স্মরণীয় উদযাপন

১৪

বেসরকারি সংস্থায় চাকরির সুযোগ, বেতন ৬০ হাজার

১৫

তীব্র বৃষ্টি উপেক্ষা করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ইবি শিক্ষার্থীরা

১৬

দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন ডিপজল

১৭

বিপৎসীমার ওপরে টাঙ্গাইলের সব নদীর পানি

১৮

পিজিআরকে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

১৯

পেট্রোম্যাক্স এলপিজিতে নিয়োগ, পদসংখ্যা অনির্ধারিত

২০
X