চট্টগ্রাম মহনগর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে মতবিরোধ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এ অবস্থায় পুরোনো কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্বের খবর যতই চাউড় হচ্ছে, ততই বাড়ছে উত্তেজনা। খোদ বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীদের সামনেই নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এসবের মাঝেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। এসব ঘিরে নতুন শঙ্কা ভর করেছে দলটির তৃণমূলে।
মূলত গত জুনে বর্ধিত সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রেজাউল করিমের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যর জের ধরেই ছাই চাপা বিরোধ নতুন করে সামনে এসেছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবারের (৪ জুলাই) বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারা। হাই কমান্ডের সামনে এ দুই নেতা কিংবা দুই পক্ষে সক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা কী বক্তব্য উপস্থাপন করেন তা ঘিরে চলছে নানা আলোচনা।
নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক কালবেলাকে বলেন, আশা করছি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো আশঙ্কা না থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শুরু হবে।
নির্বাহী কমিটিতে পক্ষে বিপক্ষে শঙ্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাহী কমিটির সভা সেই ক্ষেত্রে খোলামেলা কিছু আলোচনা তো হতেই পারে। এখানে বাদনুবাদ কিংবা শঙ্কার কিছু নেই। তবে কেন্দ্রীয় নেতাসহ নগরের দায়িত্বশীলরা যেহেতু থাকবে সেহেতু নেতাকর্মীরা প্রত্যাশার কথা জানাতেই পারেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলোচনা হতে পারে।
শঙ্কার প্রশ্নের নগর আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দ্বিধা বিভক্ত। ফলে প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিট পর্যায়ে বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করছে। তৃণমূলের সেই ক্ষোভ, রেশের জেরে নির্বাহী কমিটির সভায় উঠে আসতে পারে।
এর আগেও বর্ধিত সভা ও নির্বাহী কমিটির সভায় হট্টগোলের নজির আছে। গত ২০ জুন সদস্য সংগ্রহ, তৃণমূলের সম্মেলন এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলে ‘ঠাঁই না হওয়ার’ বিষয় নিয়ে বধির্ত সভায় বিতণ্ডায় জড়ান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দলীয় কার্যালয় দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার নোটিশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
সভায় প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আল মাহমুদ স্বপন। গত জুনে বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উতপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর এবারের কার্যনির্বাহী সভায় এসব বিষয় নতুন করে আলোচনা হতে পারে। তাছাড়া গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম দিবসের (৭৫ বছর পূর্তি) শোভাযাত্রা ঘিরে নানা অসংগতির অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পাল্টাপাল্টি পোষ্ট দিয়েছেন। ওই দিন কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শোভযাত্রার আয়োজন করে নগর আওয়ামী লীগ। একইভাবে চান্দগাঁও ওয়ার্ডসহ নগরের কয়েকটি ওয়ার্ডে পৃথকভাবে শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল। শোভাযাত্রার আয়োজকরা নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার কার্য নির্বাহী কমিটির সভার বিষয়ে প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আল মাহমুদ স্বপন। তাছাড়া নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলির সদস্য, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। আশা করছি সবার উপস্থিতিতে সভাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শেষ হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে নভেম্বরে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও হট্টগোল হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বিদ্যমান কমিটিকে ‘অবৈধ’ বলার পর বাদানুবাদে জড়ান নেতারা।
মূলত তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন নিয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিভেদ দীর্ঘদিনের। এর আগেও একাধিকবার নগর কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরও তা হয়নি। বিরোধের বিষয় নিয়ে গত বছর দুই পক্ষ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছিল। সম্প্রতি আবার নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অস্বস্তিতে আছেন।
মন্তব্য করুন