যশোরের ঝিকরগাছায় বস্তায় মাটি ভরে আদা চাষ করে লাভবান সেখানকার কৃষকরা। এতে আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদের মধ্যেও। মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে সারা দেশে আদার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বর্তমান বাজারে এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে এবং বাড়তি কিছু আয়ের আশায় চাটমোহরের কৃষকরা বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন।
চাটমোহর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহরে চলতি মৌসুমে বস্তায় আদা চাষ করেছেন কৃষকরা। চাটমোহরের মথুরাপুর, ডিবিগ্রাম, ছাইকোলা, পার্শ্বডাঙ্গাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সবমিলিয়ে প্রায় এ বছর দশ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।
পাবনার চাটমোহরের ছাইকোলা গ্রামের আতিকুর রহমান কালবেলাকে জানান, এ প্রথম বস্তায় আদা চাষ করেছি। মাটির সঙ্গে গোবর সার, খৈল, ছাই, জিংক মিশিয়ে ৩০০ বস্তা মাটি প্রস্তত করেছি। ৩৫০ টাকা কেজি দরে ২২ কেজি থাইল্যান্ডের বীজ আদা সংগ্রহ করেন দিনাজপুর থেকে। গত এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে আদার কন্দগুলো রোপণ করি বস্তার মাটিতে।
তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে চারা বের হয়ে দ্রুত বেড়ে উঠছে আদা গাছগুলো। বাড়ির পরিত্যক্ত উঠানের দেড় শতাংশের মতো জায়গা কাজে লাগিয়ে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছি আমি। চাটমোহর-কাছিকাটা সড়কের পশ্চিম পাশে সারিবদ্ধাবস্থায় বস্তায় সবুজ আদা গাছ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পথচারীরা।
আতিকুর আরো বলেন, মাঠের জমিতে আদা চাষ করা সম্ভব নয় বিধায় বাড়ির উঠানেই আদা চাষ করছি। অবসর সময়ে নিজেই পরিচর্যা করি। রোপণের আট মাস পর আদা সংগ্রহ করা যাবে। বস্তা প্রতি এক কেজি করে আদা পেলেও ৩০০ কেজি আদা পাওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এসব আদার যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা।
এ কৃষক বলেন, এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ১৬ হাজার টাকা। এলাকার বিভিন্ন মানুষ বস্তায় আদা চাষ দেখতে আসছেন। কেউ কেউ এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সফলতা পেলে ভবিষ্যতে আদা চাষের পরিধি বাড়াব।
একই এলাকার আরেক কৃষকরা জানান, বস্তায় আদা চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তা স্থানান্তর করা যায় বিধায় অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল নষ্ট হয় না। রোগের আক্রমনও কম হয়। বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত, ছায়াযুক্ত যুক্ত জায়গা কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করা যায়।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ কালবেলাকে জানান, এপ্রিল-মে মাস আদার কন্দ রোপণের উপযুক্ত সময়। আদা মূলত পাহাড়ি এলাকায় ভাল হয়। বস্তায় আদা চাষ করলে আলাদা জমি অপচয় হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আদার দাম অনেক বেশি।
তিনি বলেন, আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি, কারিগরি সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে ভালোমানের বীজ সংগ্রহে সহায়তা করছি। বস্তায় আদা চাষ করলে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক বাড়তি আয়ও করতে পারবে।
মন্তব্য করুন